রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই টালমাটাল অবস্থানে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর থেকে বাদ যায়নি ইউরোপের দেশগুলোও। যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ইউরোপের দেশ সুইডেনে। দেশটিতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে চলতি বছর দুদফায় বাড়ানো হয় ব্যাংক সুদের হার। এরই মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ কমেছে বাড়ির দামও। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে নর্ডিক অঞ্চলের এই দেশটি। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ।
প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার বাড়ায় গোটা বিশ্বজুড়েই আবাসন খাত নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সুইডেনের আবাসন খাত। এতে করে নর্ডিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশের খারাপ অবস্থা স্পষ্ট হচ্ছে।
২০ ধরে ধরে সুইডেনের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পরে দেশটির আবাসন খাতে একটি নাটকীয় পরিবর্তন চলছে। দেশটিতে বাড়ির দাম কমেছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এমনকি পিক আওয়ারে অর্থাৎ যে সময় সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিক্রি হয় ঠিক সেই সময়েও দাম কমেছে ১২ শতাংশ পর্যন্ত।
নরডিয়া ব্যাংক এবিপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আন্নিকা ওয়িনস্ট বলেন, ‘সুইডেনের আবাসন খাতে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এটি দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির জন্য অশুভ সংকেত। ’
সুইডেনের অধিকাংশ বাড়িই ব্যাংক লোনে কেনা। ফলে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ বাবদ গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। অন্যদিকে কমতে শুরু করেছে নতুন বাড়ির দাম। এ অবস্থায় লোন পরিশোধের পাশাপাশি লোকশানের শঙ্কাও করছেন বাড়ির মালিকেরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে সুইডিশ ভোক্তারা জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে। এর ফলে আবাসন সেক্টরে আরও বেদনা নিয়ে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, সুইডেনে বাড়ির মূল্য পতনের যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল সেই পতন তার থেকে বেশি হবে অর্থাৎ ২০ শতাংশের চেয়ে বেশি হবে।
সুইডব্যাংকের অর্থনীতিবিদ মারিয়া ওয়ালিন ফ্রেডহোম বলেছেন, ‘সুইডেনের মুদ্রানীতির জন্যই দেশটির আবাসন বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ’
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে সুইডেনের সুদের হার। ৬৪ শতাংশ সুইডিশ নাগরিকের বাড়ি রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের দীর্ঘমেয়াদী নির্দিষ্ট হারে লোন নেওয়া নেই। এতে করে ক্রমবর্ধমান সুদের হারের সম্মুখীন হচ্ছে তারা।