বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

এই বাংলাদেশ আমরা চাই না

অনলাই ডেক্স
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৮ সময় দর্শন

গত কতগুলো বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক এবং সেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এখনো সমানে চলছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। এমনকি করোনার মহাদুর্যোগের সময়েও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল ছিল।

দেশ বড় রকমের কোনো ঝুঁকিতে পড়েনি। এর একটাই কারণ, মানুষ এক ধরনের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন করতে পেরেছে। দু-একটি ক্ষেত্রে সমস্যা ছাড়া অন্য তেমন কোনো নাগরিক ঝামেলায় মানুষকে পড়তে হয়নি। যেমন—যানজট। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চলছে। যেমন—জঙ্গিবাদের সমস্যা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কৃতিত্বের ফলে সেই সমস্যাও এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। নারী ও শিশু নির্যাতন, দুর্নীতি, জননিরাপত্তা, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি আগের তুলনায় একটু নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে এসেছিল। কোনো মিছিল-মিটিং ছিল না দেশে। জনদুর্ভোগের রাজনীতির শিকার হইনি আমরা। মানুষ নির্বিঘ্ন জীবন কাটিয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছে নিশ্চিন্তে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলেছে। অর্থনীতির চাকা সচল থেকেছে। বাংলাদেশ অর্জন করেছে বহু কিছু। খেলাধুলায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ক্রিকেট ও সাফ গেমসে বাংলাদেশের মেয়েদের সোনালি অভ্যুত্থান। এ সবই ছিল বড় রকমের অর্জন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে। যে পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল এই বাংলায়, সেই নির্মমতার পরও স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি আমরা। এখন সেই পাকিস্তানিরা তাদের সরকারকে বলে, ‘আমাদের একটাই চাওয়া, পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে তৈরি করে দাও। ’

 

আমরা এই বাংলাদেশই চেয়েছি। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ, আমাদের গৌরবের বাংলাদেশ। কিছুদিন ধরে আমাদের এই স্বপ্নের দেশটিতে আবার শুরু হয়েছে অরাজকতা। রাজনীতির নামে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। যানজট চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। দ্রব্যমূল্য লাগামের বাইরে চলে গেছে। বড় দলগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে যানবাহন ধর্মঘট। নৌপথেও চলছে একই কাণ্ড। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা। ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে মানুষ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে ব্যাপক ক্ষতির মুখে। বড় রকমের সংঘাতের আশঙ্কা করছে মানুষ। যেকোনো সময় দুই দলের কর্মকাণ্ডের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে ঢাকার মানুষ। স্বাভাবিক জীবন যাপন চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে। জননিরাপত্তা পড়বে ব্যাপক হুমকির মুখে। গরিব শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাবে না। তাদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে না। শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাবেন অভিভাবকরা। শিল্প-কারখানায় পৌঁছতে পারবে না কর্মচারীরা যানবাহনের অভাবে। আগুন জ্বলবে পথে পথে। মানুষ মারা যাবে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়বে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে।
এই বাংলাদেশ আমরা চাই না।

যে বাংলাদেশের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল বিশ্ব, গত কয়েক দিনের কর্মকাণ্ডে সেই দৃষ্টি ঘুরে গেছে। বড় দেশগুলো বাংলাদেশে থাকা তাদের মানুষজনকে নিয়ে শঙ্কিত। কূটনীতিকরা চিন্তিত। দেশের চিন্তাশীল মানুষ ও বড় ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক দলগুলোর গোঁয়ার্তুমি, কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার মনোভাব, মিছিল-মিটিংয়ের নামে অরাজকতা, সংঘাত—সব কিছুই ১৭-১৮ কোটি মানুষের দেশটিকে মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এই বাংলাদেশ আমরা চাই না। আমরা চাই নিশ্চিন্তে বসবাস করার বাংলাদেশ। আমরা চাই প্রতিটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। একটি মানুষেরও অনিশ্চিত জীবন আমরা চাই না। পথে বেরোলে আমার ছেলে বা মেয়েটির ফিরে আসার নিশ্চয়তা চাই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই দৃঢ়ভাবে। ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করবেন, মিল-ফ্যাক্টরি অবাধে চলবে, যানবাহন অবাধে চলবে, জননিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হবে। যে লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য এখন আমরা দেখছি, এই জায়গাটি প্রতিটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। সুশাসন এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে যে বাংলাদেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। বেকারত্ব থাকবে না। কৃষকরা নিশ্চিন্তে চাষবাস করবেন। অভাব দূর করতে হবে তৃণমূল থেকে। গৃহহীনরা ঘর পাবে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানরা কোনো হাহাকারে পড়বে না। দেশটির দিকে তাকালে যেন মনে হয়, এই তো আমার সোনার বাংলা। এই তো আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ।

রাজনীতি করার অধিকার প্রতিটি মানুষেরই আছে। পৃথিবীর সব দেশেই রাজনীতির প্রচলিত কতগুলো ধারা বহমান। মিছিল-মিটিং সব দেশেই হয়। প্রতিবাদ সব দেশেই হয়। আমাদের মতো জ্বালাও-পোড়াও হয় না। কথায় কথায় রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা করা হয় না। আমরা উন্নত বিশ্বের কাতারে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তার পরও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক আচরণে অভ্যস্ত হতে পারছি না। কেন রাজধানী শহর ঘিরে আগুন, গুলি, টিয়ার গ্যাস? আর মিছিলের পর মিছিল আর সংঘাত আর জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা। এই ঢাকা শহরেই তো রাজনীতি করার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল। পল্টন ময়দান বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কেন এখন আর নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা হয় না? শহরের বাইরে গিয়ে আপনারা রাজনীতি করুন। জায়গা নির্দিষ্ট করা থাকবে। যেমন—টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বা শহরের বাইরের অন্য কোনো খোলা জায়গা। দেশের মানুষকে সুস্থ সুন্দরভাবে বাঁচতে দিন। সেই রাজনীতিই তো প্রকৃত রাজনীতি, যা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণ করবে। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করার অধিকার দেশের মানুষ কোনও রাজনৈতিক দলকে দেয়নি। রাজনীতি ধ্বংসের জন্য নয়। এই বাংলাদেশ আমরা চাই না। ধ্বংসের রাজনীতি থেকে দেশের মানুষকে আপনারা বাঁচান। আমরা সেই রাজনীতি চাই, সেই বাংলাদেশ চাই যে বাংলাদেশ নিয়ে গৌরবের অন্ত থাকবে না আমাদের। আমরা যেন আমাদের সন্তানদের বলতে পারি, ‘জন্মে তুমি যে বাংলাদেশ দেখেছ, মৃত্যুর সময় তুমি যেন তার চেয়ে অনেক বড় বাংলাদেশ রেখে যেতে পারো। তুমি মানুষ হও। বড় মানুষ হও। মানুষ বড় হলে দেশ বড় হয়। ’ আমরা সেই বাংলাদেশ চাই। সংঘাতের বাংলাদেশ আমরা চাই না। এই বাংলাদেশ আমরা চাই না।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, দৈনিক কালের কণ্ঠ; কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71