বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ করে ইন্দোনেশিয়ার সংসদে নতুন একটি আইন পাস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) পাস হওয়া আইনটি অমান্য করলে এক বছরের বেশি সাজা হতে পারে। এই আইনের ফলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
নতুন এই ফৌজদারি আইন, ইন্দোনেশিয়ান এবং বিদেশিদের জন্য একইভাবে প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ বিয়ের আগে বা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের জন্য দেশটির নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও সাজার মুখে পড়তে হবে।
প্রতিবেদনে রয়টার্স বলছে, সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থনে ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সতর্কতা সত্ত্বেও আইনটি পাস হয়েছে। তিন বছর পর থেকে এটি কার্যকর হবে। এর ফলে পর্যটকরা ইন্দোনেশিয়া বিমুখ ও নতুন কোনো বিনিয়োগ হবে না।
বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ করলেও বিবাহ পূর্ব যৌনতাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনে কালো জাদু, রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে অপমান, রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের বিপরীতে মতামত ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রতিবাদ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ায়। নতুন আইনগুলোর ফলে দেশটিতে পুলিশকে নৈতিকতার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শিল্প বোর্ডের ডেপুটি চিফ মাওলানা ইউসরান বলেন, ‘নতুন বিলটি এমন একটি সময়ে পাস হলো যখন কি না অর্থনীতি এবং পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধার হচ্ছিল। ’
‘হোটেল বা যে কোনো আবাসন পর্যটকদের জন্য সেকেন্ড হোমের মতো। তবে এই ফৌজদারি আইনের ফলে, হোটেলগুলো এখন সমস্যাযুক্ত জায়গা হিসেবে চিহ্নিত হবে,’ যোগ করেন তিনি।
কয়েক দশক ধরে আইনটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এই দণ্ডবিধির পূর্ববর্তী খসড়াটি ২০১৯ সালে পাস হওয়ার কথা ছিল। তবে এ নিয়ে তখন ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। প্রায় ১০ হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, এ ধরনের আইন নাগরিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে।
৩৩টি প্রদেশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গঠিত। এর মধ্যে পাঁচটির রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রদেশে যৌনতা এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের কঠোর আইনের নজির নেই।
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যমূলক শরীয়াহ আইন বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে জুয়া খেলা, মদ পান ও অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য সাজা দেওয়া হয়।
২০২১ সালে আচেহ প্রদেশের দুই সমকামী যৌন সম্পর্কে মিলিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল তাদের এক প্রতিবেশী। এরপরেই ওই দুজনকে প্রকাশ্যে ৭৭টি বেত্রাঘাত করা হয়। একই দিনে শরীয়াহ আইন অমান্য করায় এক নারী ও এক পুরুষকে ২০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়। এ ছাড়া মদ পান করায় দুই যুবককে ৪০টি করে বেত্রাঘাত করা হয়।