সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

ফিলিপাইনে মহামারিতে রূপ নিয়েছে শিশু যৌন নিপীড়ন

ডেস্ক রিপোর্ট Sadhin BanglaTV
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২
  • ৭৫ সময় দর্শন

সাত বছরের শিশু এরিক গিগেলস। সবে মাত্র দুধের দাঁত পড়েছে তার। কথা বলার সময় দাঁতহীন এরিকের মুখে প্রশস্ত হাসির দেখা মেলে। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে কয়েক ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে উত্তরের ঘন জঙ্গলে পাওয়া যায় এই শিশুকে।

 

এরিকের স্বপ্ন, রংধনু রঙের একটি রকেটে করে যাবে ভিন্ন গ্রহে। কথা বলার সময় বার বার মাটির দিকে দেখছিল, আর কান্না করছিল এরিক। জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, ‘বাবা-মার জন্যই কাঁদছি। ’

প্রায় মাসখানেক ধরে এরিকের সঙ্গে রয়েছেন সমাজকর্মী ফেডালিন মেরি বাল্ডো। এরিকের ১০ বছরের বোন মারিয়া ও দুই ভাইও তার সঙ্গে রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের শৈশব অন্য দশটা শিশুর মতো কাটেনি।

কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী ও পশ্চিমা বিশ্ব যখন ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক তখনই জাগ্রত হয় এই চার ভাই-বোন। তাদের বাধ্য করে লাইভ সেক্স শো করানো হতো।

ক্যামেরার সামনে এই চার ভাই-বোনকে যৌন নিপীড়ন করেছে তাদের মা। তাদের বাবা, খালা, চাচাও এতে অংশ নেন।

পরিবারটির মাঝে বিবাদ দেখা দিলে ওই শিশুদের বাবা, তার স্ত্রী অর্থাৎ ওই মা এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করে। এর পরেই তদন্তে নামে পুলিশ বাহিনী, কেঁচো খুঁড়তে বের হয় সাপ। শিশুদের লাইভ সেক্স শোর জন্য সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকে ওই অভিযুক্তরা অর্থ পেত, এমন তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এই ঘটনার কয়েক মাস পর এরিক ও তার ভাই-বোনকে উদ্ধার করে দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রিডা। আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয় ওই শিশুদের। যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের সাহায্য করে প্রিডা।

দাতব্য প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন ফেডালিন মেরি বাল্ডো। দীর্ঘ এই সময়ে ফিলিপাইনে শিশু পর্নোর অবৈধ ইন্ডাস্ট্রিকে ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখেছেন তিনি। এই সমাজকর্মী বলেন, ‘ফিলিপাইনের শিশুদের পর্নো ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম, এই বিষয়টি সবারই জানা। ’

দারিদ্র্যতা, উচ্চ-গতির ইন্টারনেট পরিষেবা ও স্বল্প পরিমাণে ইংরেজি জানার ফলে শিশু পর্নোর বিষয়টি দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছে এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে। মহামারি রূপ ধারণ করেছে এটি। করোনা মহামারির জন্য দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। এ সময়ে বাড়িতেই আটকে পড়ে শিশুরা। এই সুযোগে নগদ অর্থের জন্য মরিয়া বাবা-মায়েরা শিশুদের পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে ঠেলে দিয়েছে।

সম্প্রতি শিশুদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে একটি গবেষণা চালায় ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন। যেখানে দেখা যায়, ফিলিপাইনে প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার। সংখ্যার দিক দিয়ে এটি প্রায় ২০ লাখ।

ইউনিসেফের বিশেষ দূত নিকি প্রিয়েতো-তেওডোরো বলেছেন, ‘চলতি বছরে ফিলিপাইনে শিশু নিপীড়নের পরিমাণ বেড়েছে ২৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ’

সমাজকর্মী বাল্ডোর শঙ্কা, ফিলিপাইনে শিশুদের নিপীড়ন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে এবং এটি প্রতিবেশী দরিদ্র দেশগুলোতেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস। তবে শিশু পর্নো ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় হচ্ছে। এই যুদ্ধে জেতার কোনো আভাস নেই তাদের।

বৈশ্বিক যুদ্ধ

ঘড়ির কাঁটা ভোরের দিকে যেতেই ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের একটি টিম ম্যানিলার একটি কবরস্থানের কাছে জড়ো হন। তাদের হাতে টর্চ লাইটগুলো স্বল্প পরিমাণে জ্বলছে, তবে বন্দুকগুলো লোড করা। ক্যামেরাগুলোকে প্রমাণ রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এমন সময়ে সর্বশেষ ব্রিফিং করেন টিম লিডার। ফলাফলের জন্য বেশ চাপে রয়েছে ইনভেস্টিগেশন টিমটি।

ওই কবরস্থানের পাশেই রয়েছে কাঠের তৈরি একটি কুঁড়েঘর। যেখানে থাকেন ৩৬ বছর বয়সী এক মা, যার রয়েছে একটি স্মাটফোন। ওই ফোনে শিশুদের লাইভ সেক্স শোর একটি অনুরোধ আসে। ওই নারীর ধারণা, অস্ট্রেলীয় এক কাস্টমার তাকে অনুরোধ পাঠিয়েছেন যিনি আগেও তার শিশুদের লাইভ সেক্স শো দেখেছে। তবে ওই অনুরোধটি পাঠিয়েছে একজন পুলিশ অফিসার।

ফোনে ক্যামেরা চালু হতেই ইনভেস্টিগেশন টিমটি কুঁড়েঘরটির দরজায় পৌঁছায়। এমন সময় একটি কুকুর জোরে জোরে ডাকতে থাকে। পরে ওই ঘরে প্রবেশ করে বেশ কয়েকজন শিশুকে উদ্ধার করে তারা। একই সঙ্গে শিশুদের পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে ঠেলে দেওয়া ওই মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে পর্নোর কাজে ব্যবহৃত স্মাটফোন, বিভিন্ন প্রকারের সেক্স টয় (যৌন কাজে ব্যবহৃত খেলনা) ও বিদেশ থেকে আসা অর্থের মানি রিসিপ্ট জব্দ করে ইনভেস্টিগেশন টিমটি।

গ্রেপ্তার হওয়া মায়ের ধারণা, দেশের বাইরের তথ্য নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। হ্যাঁ, এমনটাই হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিমানবন্দর থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে, যার কাছে শিশু নিপীড়নের ভিডিও ভর্তি একটি ডিভাইস ছিল। ওই ব্যক্তির ফোনে তার ও ফিলিপাইনের এক নারীর কথোপকথন রয়েছে। ওই নারী ভিডিওগুলোর বিনিময়ে অর্থ চেয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ পরিকল্পনা করে এই অভিযানটি চালানো হয়। এতে পুলিশ বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্য অংশ নেয়। ফলস্বরূপ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গত বছরে চেয়ে শিশু নিপীড়নের রিপোর্টে প্রায় ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। শিশু নিপীড়নে যুক্ত অপরাধীদের খুঁজতে তারা ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি, নেদারল্যান্ডের ন্যাশনাল পুলিশ ও ফিলিপাইনের অফিসারদের সঙ্গে কাজ করছে। একবার অপরাধীকে শনাক্ত করা গেলে ভিডিওগুলোর উৎস পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব বলে ধারণা তাদের। তবে বিষয়টি এতো সহজ হবে না। কারণ, যখন নিপীড়নের কোনো খবর আসে সামনে আসে শিশুরাও। বিচার পেতে বিশাল পথ পাড়ি দিতে হয়।

বেশ কয়েকজন সমাজকর্মী বলছেন, শিশুদের উদ্ধার করতে এবং অভিভাবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশের কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও কেটে যায়।

প্রিডার হয়ে কাজ করা সমাজকর্মী এনামুয়েল ড্রেওরি বলেন, ‘কখনও কখনও আমরা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাই। আবার কখনও কখনও অনেক বিলম্বিত হয়। তবে আমাদের এটিকে ঘিরে কাজ করতে হবে। ’

১৯৭০ সাল থেকে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রিডা। ফিলিপাইনে উদ্ধার হওয়া শিশুদের স্বাভাবিক করতে নিজেদের নিরাময় কেন্দ্রে থেরাপি দিচ্ছে প্রিডা। মূলত আদালতে শিশু পর্নোতে ঠেলে দেওয়াদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া জন্যই এই থেরাপি দিচ্ছেন দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি।

প্রিডার প্রেসিডেন্ট বেরমিডো জুনিয়র বলেন, ‘সব কিছু শুরু হয় ওই নিরাময় রুম থেকেই। যদি শিশুরা ওই কক্ষে অপব্যবহারকারীদের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়, তবে তারা এগিয়ে যেতে পারে এবং আদালতে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71