গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত ট্যাংকি ব্যবহার করে স্প্রিংকলার পদ্ধতিতে সেচ কার্যক্রম শুরু করেছে পঞ্চগড় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত ২৪টি ট্যাংকির মধ্যে পরীক্ষামূলক দুটি ব্যবহার করে সফলতাও এসেছে। চাষিরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে সেচ দিতে পেরে সেচ খরচ কমে গেছে। আর উৎপাদিত আবাদে লাভের পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক বেশি।
২০০৫-২০০৮ সালের দিকে পঞ্চগড় জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে শহুরে ছোঁয়া দেয়ার জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয় সরকার। হাইজিন ওয়াটার এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৪টি গভীর নলকূপের সাথে ট্যাংকি স্থাপন করে পানি সরবরাহ শুরু করে। কিন্তু ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবার পর গ্রামীণ অধিবাসীরা স্ব-উদ্যোগে মোটরের সাহায্যে পানি উত্তোলন শুরু করলে এই ট্যাংকিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পরিত্যক্ত এই ট্যাংকিগুলো কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই পদ্ধতিতে প্রথমে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ট্যাংকিতে পানি উত্তোলন করা হয়। মাত্র ১৫ মিনিটে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা যায়। পরে স্প্রিংকলার এর মাধ্যমে চাষিদের আবাদে ট্যাংকিতে জমাকৃত পানি সেচ দেয়া হয়। শুরুতেই তারা তেঁতুলিয়া উপজেলার ক্ষুদ্র চা চাষিদের চা বাগানে ট্যাংকিতে জমাকৃত পানির মাধ্যমে সেচ দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে। এই উদ্যোগে চাষিদের সেচ খরচ বহুগুণ কমে গেছে।
চাষিরা বলছেন, চা গাছের পাতায় পানি দেয়ার নিয়ম থাকলেও আগে সারফেজ ইরিগেশনের মাধ্যমে চা গাছের গোড়ায় পানি দিতে হতো। ফলে চা গাছ মরে যাবার পাশাপাশি উৎপাদন অনেক কম হতো। সময় লাগতো বেশি। আগে এক বিঘা জমিতে পানি সেচ দিতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্ত ট্যাংকির মাধ্যমে স্প্রিংকলার পদ্ধতিতে পানি দেয়ার ফলে বিঘায় খরচ হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সময়ও কম লাগছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজ নগর গ্রামের চা চাষি সাজ্জাদুর রহমান রিপন জানান, এই পদ্ধতিতে প্রায় ৭ একর চা বাগানে পানি সেচ দিচ্ছেন তিনি। সেচ দিতে আগে একরে একবার পানি দিতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এই পদ্ধতিতে পানি দেয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ লাভ হচ্ছে। চা পাতার উৎপাদনও ভালো হচ্ছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি মেকানিক মোতাহার হোসেন জানান, ট্যাংকিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এতে সরকারের অনেক টাকা কোন কাজেই আসছিলো না। গত একবছর ধরে চাষিদের সাথে পরামর্শ করে এই পরিত্যক্ত ট্যাংকিগুলো চালু করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, পঞ্চগড়ে পরিত্যাক্ত ২৪টি গভীর নলকূপের ট্যাংকিগুলো কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। পর্যায়ক্রমে বাদাম, মরিচ, সবজি, ভূট্টাসহ অন্যান্য কৃষিজ আবাদে সেচের ব্যবস্থা করবেন তারা।
পঞ্চগড় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক পরিত্যক্ত ট্যাংকি থেকে প্রায় ৬০ একর জমিতে সেচ দেয়া যাবে। আর এই ২৪টি ট্যাংকি চালু হলে অত্যন্ত কম খরচে প্রায় এক হাজার ৫’শ একর জমিতে সেচ দেয়া যাবে। ফলে চা চাষিদের কৃষি উৎপাদনে খরচ কমে যাবে। লাভের পরিমাণ বেশ বেড়ে যাবে।