নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘ওয়ার্ল্ড বিজনেস ফোরামের’ আমন্ত্রণে শীর্ষ ব্যবসায়িক নির্বাহীদের জন্য আয়োজিত ‘ল্যাটিন আমেরিকান বিজনেস কনফারেন্সে’ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতা সফর করছেন।
এ উপলক্ষে কলম্বিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইউনিভার্সিটি এক্সটারনাডো ডি কলম্বিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মানে একটি বৃহৎ গণ—অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউনূস সেন্টারের সঙ্গে যৌথভাবে ৩ বছর আগে তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে একটি ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
গত ২ দশকে কলম্বিয়ার বিভিন্ন সরকার বহুবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভিন্ন উপলক্ষে দেশটিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশটিতে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একাডেমিক প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কলম্বিয়ার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো কপ—২৭ সম্মেলনে যোগদান করতে দেশের বাইরে থাকায় তার নির্দেশে সিনিয়র মন্ত্রীরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক বিশেষ পরামর্শ সভায় মিলিত হন। বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্টের অবর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশটির শ্রমমন্ত্রী গ্লোরিয়া ইনেস রামিরেজ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এই পরামর্শ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জার্মান উমানা মেন্ডোজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান ভ্যালেজকুয়েজ গোমেজ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী প্যাট্রিসিয়া আরিজা এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী (অর্থমন্ত্রী কপ—২৭ সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকায় তার প্রতিনিধি হিসেবে) দিয়েগো আলেহান্দ্রো গুয়েভারা কাস্তাদেনা।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কলম্বিয়ায় আগমনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। মন্ত্রীদের প্রত্যেকেই তাদের স্ব—স্ব কাজ ও দায়িত্বের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন এবং ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে তাদের কাজের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তারা কলম্বিয়ার ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণী বিষয়সমূহ, বিশেষ করে- দারিদ্র্য, কৃষি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও তরুণদের ব্যবসা—উদ্যোগ বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পরামর্শ চান।
ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে কলম্বিয়ায় ইউনূসের বিভিন্ন কাজ, যেমন- দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত কর্মসূচিগুলো উপস্থাপন করে। এ ছাড়াও, ইউনূস সেন্টার দেশটির আমাজনিয়া অঞ্চল এবং অন্যান্য এলাকাগুলোতে পরিবেশ ও চক্রাকার অর্থনীতি বিষয়ে ইউনূস এনভায়রনমেন্ট হাবের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরা হয়।
এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় তার ‘৩ শূন্যের পৃথিবী’র রূপকল্প তুলে ধরেন। তিনি সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে এবং কীভাবে তরুণদের দ্বারা ‘৩ শূন্য ক্লাব’ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে এরসঙ্গে যুক্ত করে একটি ‘৩ শূন্যের পৃথিবী’, অর্থাৎ- শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় উপস্থিত মন্ত্রীরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রূপকল্প এবং একটি উন্নততর পৃথিবী গড়ে তোলায় তার বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচির প্রশংসা করেন। এরপর মন্ত্রীরা ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা, বিশ্বায়ন, তরুণদের ভূমিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও বনাঞ্চল ধ্বংস এবং শান্তির সংস্কৃতি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বিশদ আলোচনায় লিপ্ত হন।
মন্ত্রীরা বলেন, এই বিষয়গুলো তাদের সবার সাধারণ ও অগ্রাধিকারের বিষয় এবং কলম্বিয়ার ৩ মাস বয়সী সরকার তার দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ‘সামগ্রিক শান্তি’র রূপকল্প বাস্তবায়নে কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরামর্শ চান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের মূল ভার্সনটি কলম্বিয়ায় যেভাবে বিকৃত ভঙ্গীতে ও মুনাফা সর্বোচ্চকরণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, প্রকৃত ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক। একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা কলম্বিয়ার সার্বিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শ্রমমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তার চিন্তা—ভাবনা ও আইডিয়া তাদের সঙ্গে বিনিময়ের জন্য তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, ইউনূস সেন্টার ও কলম্বিয়া সরকারের যৌথভাবে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে এবং ইউনূস এনভায়রনমেন্ট হাব এবং কলম্বিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ- এক্সটারনাডো এবং আই সি ই এস আই ক্যালি’র ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার দুটি দ্বারা পরিচালিত প্রকল্পগুলো তারা আগ্রহের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী সভা শেষ হওয়ার পর মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বই উপহার দেওয়া হয়।