ন্যাটোর হয়ে আফগানিস্তানে দীর্ঘ ১৩ বছর অভিযান পরিচালনা করেছিল ব্রিটিশ বাহিনী। এ সময়ে তাদের হামলায় ১৬ শিশু মারা গিয়েছিল বলে দাবি করেছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার অন্তত চারগুণ আফগান শিশুদের মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ১৬ জন শিশুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও তারা এর চার গুণ অর্থাৎ ৬৪ শিশুর মৃত্যুবাবদ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ওই সব শিশুরা ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অভিযানে মারা যায়।
দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্সের (এওএভি) এক অনুরোধ থেকে নতুন এ তথ্য সামনে এসেছে। বিমান হামলা ও ক্রসফায়ারের ঘটনার সময় আটকা পড়ে এসব শিশু মারা গেছে।
এওএভির বিশ্বাস, অভিযানে ব্রিটিশ সেনারা শিশু মৃত্যুর যে সংখ্যা বলেছেন তা বাস্তবের চেয়ে অনেক কম। প্রকৃত পক্ষে ১৩৫ জন শিশু নিহত হতে পারে। কেননা ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু নিহতের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে শুধু ছেলে বা মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করেছে। সব সময় নিহতদের বয়স ও পরিস্থিতি যোগ করা হয়নি।
দাতব্য সংস্থাটি বলছে, নিহত ১৩৫ জনের মধ্যে কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, ৮৮১ মৃত্যুর দাবি করে ক্ষতিপূরণের চেয়েছিল আফগান সরকার। তবে যুক্তরাজ্য সরকার এই সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা মাত্র চার ভাগের এক ভাগ মানুষ হত্যার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
ক্ষতিপূরণের যেসব দাবি সফল হয়েছে তার মধ্যে একই পরিবারের আট সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। তারা ২০০৯ সালের মে মাসে হেলমান্দ প্রদেশের একটি গ্রামে পশ্চিমা জোট বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়।
একজন ব্যক্তি তার ভাতিজা, ভাতিজার দুই স্ত্রী ও তাদের পাঁচ সন্তানের মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। তার দাবি নিষ্পত্তি করতে ১৪৪ দিন লাগে। এ জন্য তাকে সাত হাজার ২০৫ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
২০০৬-১৪ সাল পর্যন্ত ২৮৯ আফগান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর জন্য ৬ লাখ ৮৮ হাজার পাউন্ড দিয়েছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এওএভি বলছে, এই ক্ষতিপূরণ আবেদনের জন্য নিহতের ছবি, জন্ম সনদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে হতো স্বজনদের। তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমনটা নিশ্চিতের জন্য অনেককে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের
সামনে হাজির হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে হয়েছে।
মৃত্যুর জন্য আফগানিস্তানে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সামনে আসে ২০২১ সালে। ওই সময় এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, এক বেসামরিকের জন্য সর্বনিম্ন ১০৪ পাউন্ড দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে গবাদি পশু ও সম্পত্তির জন্য বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সংঘাতের সময় যে কোনো বেসামরিকের মৃত্যু একটি ট্র্যাজেডি। যখন কোনো শিশু ও নারীরা নিহত হন তা আরও কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। আমাদের বাহিনী বেসামরিকদের আঘাত কমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটি সম্পূর্ণরূপে করা যায় না।
মৃত্যুর বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাবের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করেছেন এওএভির পরিচালক লেইন ওভারটন। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানতে গবেষকদের কয়েক বছর সময় লেগেছে। এমনকি সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ’
সামরিক অভিযানে বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সমালোচনা করে আসছে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও দাতব্য সংস্থাগুলো।