বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। যা জীবনযাত্রার ব্যয়ে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। জর্জিয়েভা আরও বলেন, করোনা মহামারিতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের কারণে তা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
করোনা মহামারির পর বিশ্বের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।
ভালো নেই বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা। মুদ্রাস্ফীতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলে দেশে দেশে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাকাল মানুষ। মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানা যখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আরও একবার হুঁশিয়ারি দিলেন আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
মিশরে চলমান জলবায়ুবিষয়ক কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার ক্রিস্টালিনা বলেন, ‘খুব সম্ভবত আমরা (মুদ্রাস্ফীতির) চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছি। আমরা দেখছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতি রোধের বিরুদ্ধে লড়তে একজোট হচ্ছে। এতে আমরা যদি সফল না হই, তাহলে পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি বাধাগ্রস্ত হবে। ’
তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক উৎপাদন ও এর সরবরাহ ব্যবস্থার অসংগতি পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যেখান থেকে নামিয়ে আনা কঠিন হবে। ক্রিস্টালিনার ভাষায়, ‘আমাদের আশঙ্কা, মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি কঠিন হতে যাচ্ছে, যা কাঙ্ক্ষিত ২ শতাংশের আশপাশে নামিয়ে আনা কঠিন হবে। কেন? কারণ মুদ্রাস্ফীতির চালকেরা কেবল সরবরাহ এবং চাহিদা ব্যাহত করে না। বরং ব্যয় কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করে যে, তখন আমাদের উপলব্দি হয় আমরা শুধুমাত্র খরচের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিই। ‘
‘সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ শৃঙ্খল) নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সাপ্লাই চেইনের বৈচিত্র্য দেখতে যাই, তবে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে দামের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করবে’-যোগ করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক তহবিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।
গত মাসে প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনীতির উপর সমীক্ষা শেষে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৪.১ শতাংশে নেমে আসার আগে ২০২২ সালের তৃতীয়ভাগে ৯.৫ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে থাকবে। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক বাজারের বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের প্রত্যাশা, এই অবস্থায় প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবিলায় বড় সুদের হার বৃদ্ধি থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করবে।
এদিকে, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্মাতাদের সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ অতীতের তুলনায় আরও বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে।
গত সপ্তাহে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছিল, উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়ার আগে অক্টোবরে যুক্তরাজ্যতে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের কাছাকাছিতে থাকবে বলে আশা করেছিল। তবে বিদ্যুতের ঊর্ধ্বগতি এবং খাদ্য ও পানীয়র ক্রমবর্ধমান ব্যয়ে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৮২ সালের পর দেশটিতে সর্বোচ্চ।