স্বর্ণের চাহিদা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল। গোল্ড কাউন্সিল জানায়, ফিউচার মার্কেটে নিম্নমুখী প্রবণতা ও এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে লেনদেন হওয়া পণ্যের বহিঃপ্রবাহ সত্ত্বেও এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে।
প্রান্তিকভিত্তিক চাহিদা প্রতিবেদনে কাউন্সিল জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮১ টনে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চাহিদা ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে এ বছরের প্রথম ৯ মাসে চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবহারকারী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বমুখী ক্রয় চাহিদা বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বিনিয়োগ গবেষণা বিভাগের পরিচালক জন কার্লোস আর্টিগ্যাস বলেন, বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের ব্যবহার বেড়ে মহামারির আগের অবস্থায় ফিরেছে। স্বর্ণালংকারের চাহিদা বৃদ্ধি, বার ও কয়েনের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অব্যাহত স্বর্ণ ক্রয় চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে।
কার্লোস আর্টিগ্যাস বলেন, এ বছর শক্তিশালী চাহিদার কারণেই মূল্যবান ধাতুটি বেস্ট পারফর্মিং অ্যাসেট হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী মুদ্রাসংকোচন নীতি বিশ্বব্যাপীই ধাতুটির দামের ওপর প্রভাব ফেলছে। গত মাসে টানা সাত মাসের মতো এটির দাম কমেছে। ১৯৬০ সালের পর এবারই প্রথম এত লম্বা সময় ধরে ধাতুটির বাজার নিম্নমুখী।
গোল্ড কাউন্সিলের গবেষণা বিভাগ বলছে, ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি ইল্ড ৪ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে ২০ বছরের সর্বোচ্চে আরোহণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে দাম এ বছরের শুরুর তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণালংকারের ব্যবহারে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার উদ্বেগের পরও ব্যবহার ১০ শতাংশ বেড়ে ৫২৩ টনে উন্নীত হয়েছে। চাহিদা ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৫৪ টনে দাঁড়িয়েছে।
তবে এ প্রান্তিকে এক্সচেঞ্জগুলোয় বিনিয়োগ ব্যাপক কমেছে। বিনিয়োগকারীদের কিছু সেগমেন্টে দুর্বল প্রবণতার প্রতিফলন এটি। বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৪ টনে। তবে বার ও কয়েনে বিনিয়োগ ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এ খাতে ৩৫ টন বিনিয়োগ হয়েছে। যদিও কমে যাওয়া ইটিএফে এটি ভারসাম্য আনতে পারেনি। অন্যদিকে এক্সচেঞ্জগুলোর বাইরেও বিনিয়োগ চাহিদা লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। প্রযুক্তি খাতে ধাতুটির চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে ইলেকট্রনিকস খাতে ধাতুটির ব্যবহার কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অব্যাহত স্বর্ণ ক্রয় করছে। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত প্রান্তিকে ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ টন।
এদিকে গত তিন মাসে স্বর্ণের বৈশ্বিক সরবরাহ ১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২১৫ টনে উন্নীত হয়েছে। এ সময় ধাতুটির পুনর্ব্যবহার কমলেও ঊর্ধ্বমুখী উত্তোলন তাতে ভারসাম্য এনেছে।
গোল্ড কাউন্সিল জানায়, এ প্রান্তিকে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধিতে ভারত বড় ভূমিকা রেখেছে। অন্যতম শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশটিতে চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের পর এটিই ছিল চাহিদা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে শক্তিশালী মাস। মূলত ধর্মীয়সহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশটিতে স্বর্ণের কেনাবেচা ছিল ঊর্ধ্বমুখী।