পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ২৯ টি পূজা মন্ডবে সার্বজনীন দুর্গোৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমীতে আবিরের রঙে দেবীর বরণ ও দর্পন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সকালের পূজা পর্ব। তারপর অনুষ্ঠিত হয় সিঁদুর উৎসব। প্রতিটি মণ্ডপে দেবীর বন্দনায় ছিল বিষাদের সুর। করোনার পর এবার ভক্তদের বেশি অংশগ্রহণ ছিল মণ্ডপগুলোতে।
প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে ভক্তের হৃদয়ে দেবী দুর্গাকে নিয়ে আসতে মন্দিরের রামনাবাধ নদীতে সন্ধায় দশমীতে চলে ঘট বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমেই ছিল বিহিত পূজার পরে দর্পন বিসর্জন। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলে ছিলো দেবীর বিদায়ের সুর। বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই মুখ ভার সকলের। পুজো শেষ মানেই আনন্দও শেষ। তবে ঘরের মেয়েকে বিদায় জানাতে মনখারাপ ও চোখের জলে নয়, হাসি মুখে সিঁদুর খেলা হয়।
সিঁদুর খেলার আক্ষরিক অর্থ হল সিঁদুর নিয়ে খেলা। বাঙালি হিন্দু মহিলারা বিজয় দশমীর দিন, দুর্গাকে বিদায় জানানোর আগে সিঁদুর খেলেন। এই প্রথাটি একটি নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মেনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এর মধ্যে দিয়ে সৌভাগ্য ও স্বামীদের দীর্ঘায়ু বয়ে আনা হবে।
রীতি মেনে দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ছুঁইয়ে সে সিঁদুর নিজে ও অন্যকে মেখে উৎসব করেন সনাতন ধর্মের সধবা নারীরা। সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে পৃথিবী জরামুক্ত করার প্রার্থনাই ছিল সকালে। দুর্গাপূজার সিঁদুর খেলার ইতিহাস প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো। বাঙালি হিন্দুদের বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলার সঙ্গে সঙ্গে ধুনুচি নাচেরও প্রথা রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ধুনুচি নাচের মাধ্যমে দুর্গাকে তুষ্ট করা হয়। এতে দেবী মহিষমর্দিনী প্রসন্ন হন। সিঁদুরকে বিবাহিত মহিলাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হয়। ভক্ত ছবি রানী দাস বলেন, দেবী দুর্গা আগামী বছর আবার সঙ্গে করে শাঁখা-সিঁদুর নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে তারা সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন। তবে শুধু বিবাহিত নারীদের মধ্যেই এই আনুষ্ঠানিকতা সীমাবদ্ধ নয়। এদিন সবাই মণ্ডপে ভিড় করেন। নেচে-গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিত নারীরাও গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর। পূজা শুরুর পর দুদিন আকাশে মেঘ-বৃষ্টি আর রোদের খেলা চললেও, দশমীর আকাশে ছিলো যেনো শারদীয় সাজ। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিলো নিরাপত্তা রক্ষীদের সতর্ক প্রহরা। কমেছে করোনার ঝুঁকিও। তাই এবার মণ্ডপগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড় আর উল্লাস।
দুপুর থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। এভাবেই পাঁচ দিনের এই শারদীয় উৎসব শেষ হয়। ভক্তরা চোখের জল ফেলে এক বছরের জন্য দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান। দেবীকে বিদায় জানাতে ভক্তদের ঢল নামে প্রতিটি মন্দির থেকে নদী পযন্ত।