সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক হাসানের বিরুদ্ধে অসাদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ১৫ আগষ্টের জাতীয় শোক দিবসের পরিবর্তে আগের দিন অথ্যাৎ ১৪ আগষ্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠান করারও অভিযোগ রয়েছে। তবে তার এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী।
এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাদাচরণের কারণে অবশেষে স্থানীয় দলিল লেখক সমিতি কলম বিরতি দেয়ায় অফিসের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। সোমবার (৩ অক্টোবর ) সকাল থেকে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা সেবা গ্রহীতা নারী-পুরুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পাশাপাশি সরকার এক দিনে হারিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। অভিযোগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর তিনি এ উপজেলায় রেজিস্ট্রার হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে অসাদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যাবহার সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগের প্রতি তোয়াক্কা না করে তিনি দাপটের সাথে চলতে থাকেন।
জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি সাব-কবালা দলিলকে কেন্দ্র করে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দলিল লেখক হাসির আলীর সাথে সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক হাসানের বাক বিতন্ডা হয়। তখন কোন কারণ ছাড়াই তিনি এই কবালা রেজিষ্ট্রি করবেন না বলে জানালে হাসির আলী এর কারণ জানতে চান, তখনই এই বিরোধের সূত্রপাত ঘটে বলে উপস্থিত লেখক অনেকেই জানান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ দন্ডবিধি ২২৮ ধারা এবং দলিল লেখক বিধিমালা ২০১৪ এর ১২ ধারা লঙ্ঘন আইনে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবেনা ৭ দিনের মধ্যে জবাব দাখিল সহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অত্র কার্যালয়ে তাকে দলিল মুসাবিদা থেকে বিরত থাকার জন্য নোটিশ প্রদান করেন ।
একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন কর্মকান্ডে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সকল দলিল লেখকরা। সমিতির উদ্যোগে রোববার (২ অক্টোবর) মোহরীর বারে এক সভা সংগঠনের সভাপতি বশির আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমিতির সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। উক্ত সভায় সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক হাসানের অহেতুক অন্যায়ভাবে হয়রাণী, ক্ষমতার অপব্যবহার, দলিল লেখকদের অবমূল্যায়ন এবং দলিল লেখক হাসির আলীকে হেনস্থার প্রতিবাদে অদ্য ৩ অক্টোবর ২২ ইং হইতে অনিদিষ্ট কালের জন্য কলম বিরতির ঘোষণা করেন।
এমন ঘোষণায় ক্ষিপ্ত সাব-রেজিস্টার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক হাসান মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, একজন দলিল লেখকের আচরণের কারণে নোটিশ দিয়েছি। আমি কারো সাথে অসাধাচরণ করিনি। ক্ষমতার দাপট তো থাকবেই, সরকার আমাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। এটা আমার সরকার প্রদত্ত ক্ষমতা। অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে পারেন না, আপনার কথা রেকর্ড হচ্ছে বলেও তিনি হুমকির ইঙ্গিত করেন। উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বশির আহমদ বলেন, মানুষের সাথে অসাদাচরণ, দলিল লেখকদের অবমূল্যায়ন, দলিল লেখক হাসির আলীকে অহেতুক হয়রানি ও হেনস্থার প্রতিবাদে আমরা কলম বিরতি করছি।
তিনি সম্মানিত কোন মানুষের সাথে অফিসে আসলে ভাল আচরণ করেন না। ক্ষমতার অপব্যাবহার করা ঠিক নয়। অভিযোগের বিষয়ে হাসির আলী বলেন, প্রেরিত নোটিশের জবাব আমি দাখিল করেছি। এজলাস চলাকালে একটি দলিল নিয়ে গেলে তিনি আমার সাথে অশোভন আচরণ করেন। কাগজপত্র সঠিক থাকলেও কাগজাদি না দেখে তিনি আমাকে উত্তেজিত হয়ে ফিরিয়ে দেন। ক্ষমতার অপব্যাবহার সহ মাত্রা অতিরিক্ত উৎকোচ না দেওয়ায় গরীব সেবা গ্রহীতা ন্যায় ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও নোটিশের জবাবে তিনি উল্লেখ করেন।
অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে ২ দিন অফিসে জমি রেজিষ্ট্রেশন হয়। দলিল লেখক সমিতি কলম বিরতি ঘোষণা করায় মানুষের যেমন কষ্ট, তেমন রেজিস্ট্রি না হলে সরকার এ অফিস থেকে দিনে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব হারায়। এ বিষয়ে একটা সমাধান হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ মফিজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়টা আমার জানা ছিলনা, আজ বিকেলে শুনেছি।কি করা যায়, সেটা দেখছি। রনি মিয়া, সুনামগঞ্জ তাংঃ ০৩ অক্টোবর ২০২২ ইং মোবাইলঃ ০১৭৫৬৩৬৫৬২২