ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের মালাং শহরে একটি ঘরোয়া ফুটবল ম্যাচ নিয়ে দুপক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪ জনে। এ ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিবিসি জানায়, শনিবার গভীর রাতে একপক্ষের সমর্থকরা মাঠে ঢুকে পড়ে এবং আক্রমণ করে। পরে পুলিশ টিয়ার-গ্যাস নিক্ষেপ করে।এ সময় মাঠের দর্শকরা কাঁদানে গ্যাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ মারা গেছেন পদদলিত হয়ে।
স্থানীয় দল আরেমা এফসি পূর্ব জাভাতে তিক্ত প্রতিপক্ষ পার্সেবায়া সুরাবায়ার কাছে ২-৩ গোলে হেরে যায়। পরাজিত দলের সমর্থকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
দেশটির মুখ্য নিরাপত্তা মন্ত্রী জানান, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার। কিন্তু এর চেয়ে প্রায় ৪ হাজার বেশি দর্শক প্রবেশ করে স্টেডিয়ামে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ লিগের সব ম্যাচ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো।
এ ঘটনায় প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর পর ভক্তদের পিচের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়।
পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা বলেন, পিচের দিকে দর্শকরা ছুটে এলে পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর ফলে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয় এবং শ্বাসরোধের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এটি নৈরাজ্যকর হয়ে উঠেছিল। তারা অফিসারদের ওপর হামলা শুরু করে, গাড়ির ভাঙচুর চালায়। নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। সবাই নৈরাজ্য করেছে তা নয়, তিন হাজারের মতো যারা মাঠে প্রবেশ করেছির তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
পুলিশপ্রধান বলেন, সেখানে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, অক্সিজেনের অভাব ছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ভক্তরা পালানোর জন্য বেড়ার ওপর ঘোরাফেরা করছে৷ পৃথক ভিডিওতে মেঝেতে প্রাণহীন মৃতদেহ দেখা যায়।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বলেছে, ম্যাচগুলোতে পুলিশের কোনো ধরনের ‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ গ্যাস’ বহন করা বা ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইন্দোনেশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএসএসআই) বলেছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলের মুখকে কলঙ্কিত করেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল ম্যাচে সহিংসতা নতুন নয় এবং আরেমা এফসি এবং পার্সেবায়া সুরাবায়া দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী।
সংঘর্ষের আশঙ্কায় পারসেবায়া সুরাবায়ার ভক্তদের খেলার টিকিট কিনতে নিষেধ করা হয়েছিল।
কিন্তু মুখ্য নিরাপত্তামন্ত্রী মাহফুদ এমডি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, কাঞ্জুরুহান স্টেডিয়ামে ম্যাচের জন্য ৪২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি উইডোডো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সব লিগা স্থগিত করার আদেশ দেন। এটাই যেন ‘জাতির শেষ ফুটবল ট্র্যাজেডি’ হয় সেই আহ্বানও জানান তিনি।
এর আগে ১৯৬৪ সালে লিমায় পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের খেলায় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং ১ হাজার জনের বেশি আহত হন।
১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ৩৯ জন মারা যান এবং ৬০০ জন আহত হন।