এক দশক আগে রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলীতে গুলি করে হত্যা করা হয় বাসু মিয়াকে। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে তখন মো. আলকেস
(৫২) গ্রেপ্তার হন। চার মাস পর জামিনে বেরিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। নাম পাল্টে ছদ্মবেশে শ্রমিক, বালুর ব্যবসা, ট্রাকচালকসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন।আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতে দুজনকে খুন করেন তিনি। তার হাতে খুন হওয়া আজহার ও সানু ছিলেন বাসু হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী।
প্রায় এক দশক পর আলকেসকে গ্রেপ্তার করে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব। শনিবার র্যাব-৪ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার বরিশাল থেকে আলকেসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব বলেছে, একটি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৪ মে মিরপুরের শাহ আলীর চটবাড়ীর নবাবেরবাগ এলাকায় বাসুর ওপর আক্রমণ চালানো হয়। আলকেসের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। তারা আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্রও রড নিয়ে হামলা করেন। আলকেস আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে বাসুর মাথার বাঁ পাশে গুলি ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাঁর ভাই চিনু মিয়া বাদী হয়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলকেস আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। চার মাস পর জামিনে বেরিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এই মামলায় বিচার শেষে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আলকেসসহ পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব জানিয়েছে, আলকেস জামিনে বেরিয়ে মিরপুরে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন। এ নিয়ে বাসু হত্যা মামলার দুই আসামি আজহার ও সানুর সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এর জের ধরে সাভার এলাকায় আজহার ও সানুকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় আলকেস পলাতক আসামি। অবৈধভাবে বালু তোলা ও সংরক্ষণ করায় পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ ছাড়া শাহ আলী থানার ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
গ্রেপ্তার এড়াতে আলকেস বারবার ঠিকানা, পেশা ও বেশভূষা বদলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। প্রথম দিকে তিনি সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজের পাশাপাশি ডাকাতি করতেন। পরে বরিশাল গিয়ে ট্রাকচালকের সহকারী ছিলেন। পরে একসময় তিনি বাসের চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর সময় সিলেটে তার বাসের নিচে চাপা পড়ে একজন মারা যান। এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় পরিবহন আইনে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। ওই ঘটনার পর তিনি পালিয়ে কুয়াকাটায় গিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন। তখন মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করতেন তিনি। সর্বশেষ দেড় বছর ধরে তিনি দূরপাল্লার একটি পরিবহনে চালক হিসেবে কাজ করছিলেন।