সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুরে দক্ষিনাঞ্চল জালালপুরে যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ফের নিঃস্ব-ভূমিহীন হয়ে পড়ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের (গুচ্ছগ্রাম) বাসিন্দারা। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে আবারও মানবেতর জীবনযাপন শুরু হয়েছে তাদের। এছাড়াও যমুনা নদীর পানি কমা-বাড়ার সাথে সাথে নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙনে ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্ধশতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
জানা যায়, শুক্রবার সকালে যমুনা নদীর জালালপুর ও পাকুরতলা পয়েন্টে তীব্র ভাঙন শুরু হয়।মুহূর্তের মধ্যে যমুনার ভাঙনে অন্তত ৯টি বসতভিটা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জালালপুর ও পাকুরতলা এলাকায় আবদুল করিম, ছকিনা, আমানত আলীর বাড়িসহ মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকটি বসত ভিটা বিলীন হয়ে যায়।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আশ্রয়ন প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রাম) অন্তত ৩৪টি ঘর ও এলাকার অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে চলে যায়। সবকিছু হারিয়ে এসব মানুষে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করলেও জনপ্রতি বা প্রশানেনর কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। ভাঙনের কারণে বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে এনায়েতপুরের ৪টি গ্রামের কয়েশ বাড়ি ঘর, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জানান, জালালপুর এলাকায় নদী ভাঙনে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়িঘর বিলীনের সংবাদ পেয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি জানান, ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছ গ্রামের ২৩৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যমুনার ভাঙনে ইতোমধ্যে ৯০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, এনায়েতপুর-থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কলোমিটার এলাকায় রক্ষায় সরকার সাড়ে ৬শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও পাউবো কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে নদী তীর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত জিওব্যাগ ফেলানোর কারনণে জিওব্যাগসহ বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিস্তৃর্ণ এলাকা রক্ষায় জিওব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তারা।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা প্রয়োজন। না হলে বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এনায়েতপুরের ৬ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ইতোমধ্যে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। তবে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছিল। কিন্তু তিন/চারটি পয়েন্টে প্রায় এককিলোমিটার এলাকা জিওব্যাগসহ বিলীন হয়ে গেছে। তারপরেও যেখানে ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে সেখানে নতুন করে জিওব্যাগ ফেলানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পানি কমে গেলে জালালপুর এলাকায় নদী ড্রেজিং করে গতিপথ পরিবর্তন, একটি ক্রসবার এবং সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।