দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করলেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে এই হাসপাতালে রয়েছে ১০০টি আইসিইউ বেড। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯টি ফ্লোর ও ৩টি বেজমেন্ট থাকবে।
যেখানে থাকছে আইটি বেইজড মাল্টিডিসিপ্লিনারি এবং স্পেশালাইজড হেলথ কেয়ার সার্ভিস। এই হাসপাতালটি সুসজ্জিত হবে প্রায় ৭৫০ বেড দিয়ে। এর মধ্যে থাকবে ১০০টি আইসিইউ বেড, ১০০টি ইমার্জেন্সি বেড এবং থাকবে সুবিশাল পার্কিং সুবিধা (প্রায় ২৫০টি)।
অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালকে প্রধানত ৫টি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে থাকবে ইমার্জেন্সি মেডিকেল সেন্টার, কার্ডিও এবং সেরিব্রোভাসকুলার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার, কিডনি ডিজিজ সেন্টার এবং চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার।
এছাড়াও হাসপাতালটিতে রয়েছে ১১টি মড্যুলার অপারেশন থিয়েটার। যেখানে উন্নত মানের সার্জারিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকবে ৬টি ভিভিআইপি/ভিআইপি কেবিনসহ অন্যান্য আইসোলেটেড কেবিন, ওয়ার্ড, সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এসআইসিইউ), নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ), পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ), ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং মেডিকেল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এমআইসিইউ)। উন্নত এসব সেন্টার এবং ইউনিটে কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে সব অ্যাডভান্সড যন্ত্র ও অপারেটিং থিয়েটার টুলস, যার গুণগত ব্যবহার নিশ্চিত হবে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রকল্পটিকে দুই উপায়ে সাজানো হয়েছে। প্রথমত, হাসপাতাল নির্মাণ আর দ্বিতীয়ত উন্নত প্রশিক্ষণ। এই স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ মোট ৬১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। যা জাতির জন্য দক্ষ জনশক্তি হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন যুগের সূচনা হবে। হাসপাতালটি চালু হলে দেশেই রোগীরা বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বায়োমেডিকেল রিসার্চ, জিন থেরাপি, রোবটিক সার্জারি এবং জনগণের জন্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিয়েটিক, অরগান ট্রান্সপ্লান্ট, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, নিউরোসার্জারিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা বাংলাদেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, দেশের জনগণের উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রত্যয়ে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রথম সেন্টারভিত্তিক সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬১১৮ দশমিক ২৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১০৪৭৩৩ দশমিক ৮৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৩৩৮৮১ দশমিক ৩৫ লাখ এবং বিএসএমএমইউর নিজস্ব অর্থায়ন ১৭৫০৩ দশমিক ০৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক (ইডিসিএফ, ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর প্রকল্পের ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়। ঋণচুক্তির আওতায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনধিক ১৩০, ৯১৭,০০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ০.০১ শতাংশ সরল সুদে ঋণ সাহায্য বরাদ্দ হয়েছে। যার গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ পরিশোধ করতে হবে না) ১৫ বছর এবং ঋণ পরিশোধের সময়কাল ৪০ (চল্লিশ) বছর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।