বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ও ভালো চাকরি দেয়ার নাম করে অবৈধ ভাবে বিদেশে পাঠিয়ে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তোফাজ্জেল তালুকদার ও তার স্ত্রী লেবানন প্রবাসী নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীর পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড চৌদ্দকানীর আসাদুল খা পিতা. জয়নাল খা ও মাতা. নূরচেহারা বেগম।
৩ বছর আগে আসাদুলকে লেবানন রাষ্ট্রে ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার নাম করে একই এলাকার তোফাজ্জেল ও তার প্রবাসী স্ত্রী নাজমা নানা প্রলোভন দেখায়। ফাঁদে পরে আত্মীয় স্বজনের কাছে ধার দেনা ও ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ করে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জোগাড় করে আসাদুলের পরিবার তোফাজ্জেল এর কাছে দেন।
টাকা পেয়ে তোফাজ্জেল লেবাননে থাকা তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমার মাধ্যমে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে আসাদুল কে লেবাননে পাঠায়। নাজমা বেগমের কাছে লেবাননে আসাদুল পৌছালে তাকে যে চাকরির কথা বলে নেয়া হয়ছে তা না দিয়ে নিম্নমানের কষ্টের কাজ দেয়।
এছাড়া আসাদুলকে লেবাননে বৈধভাবে চলাচল করার জন্য আকামা করে দেয়নি নাজমা। ফলে পালিয়ে পালিয়ে থাকাতে হয়, কোন কাজ করতে পারে না। এ কারনে উপার্জন বন্ধ থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারে না আসাদুল উল্টো আরো বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে হয়।
ছোটখাটো যে কাজ করেন তার টাকাও নাজমা নিয়ে যায়। আসাদুল লেবাননে ৩ বছর ধরে আছেন যে স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়িজমায় সে স্বপ্ন পূরণের বদলে এখন তিনি কষ্টে দিনযাপন করছেন। এদিকে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে পারে না আসাদুল ফলে ঋণের টাকা পরিষদ করতে পারছে না পরিবার।
এ নিয়ে থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করলে শালিস বৈঠক বসে সেখানে তোফাজ্জেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মানিত শালিসগণের নিকট দায় স্বীকার করেন। তিনি তার লেবানন প্রবাসী স্ত্রী নাজমার সাথে কথা বলে আসাদুল কে আকামা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শালিসগণ তাকে ৩ মাসের সময় বেধে দেয় আকামা করে দেয়ার জন্য। বলা হয় ৩০ মে ২০২২ তারিখ এর মধ্যে আকামা করে দিতে।
কিন্তু বেধে দেয়া সময় পার হয়ে গেলো আকামা করে দেয় নাই তোফাজ্জেল তালুকদার। উল্টো সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এমন অবস্থায় আসাদুলের দরিদ্র পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা এর সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
আসাদুলের মা নূরচেহারা বেগম বলেন, আমার কোলের একমাত্র সন্তান আসাদুল। জীবনে যে কষ্টের কাজ করে নাই, আজকে বিদেশে গিয়ে তাই করতে হয়। আমি বিদেশে যাওয়ার পক্ষে ছিলাম না। তোফাজ্জেল ও তার বউ নাজমা আমার ছেলেরে লোভ দেখিয়ে, ফুসলিয়ে লেবানন নেয়।
বেশি বেতনের ভালো চাকরি দেয়ার কথা বইলা নিয়া এখন কষ্টের কাজ করায়, ময়লা পরিষ্কার করার কাজ দিছে, মারধর করে। আমার ছেলেরে আকামা কইরা দেয় নাই এর কারণে পালিয়ে পালিয়ে থাকাতে হয়, কোন কাজ করতে পারে না। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারে না।
আমি ঋণ করে বিদেশে যাওয়ার টাকা দিছি এখন এই টাকা আমি কিভাবে দিবো। আমি এর বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।বাবা জয়নাল খা বলেন, তোফাজ্জেল ও নাজমা বড়লোক হওয়ার লোভ দেখিয়ে আমার ছেলেরে লেবানন নিয়ে গেছে। এখন আমার ছেলে কোন কাজ করতে পারে না আকামা নাই। আকামা করে দেয়ার কথা ছিলো তোফাজ্জেল এর কিন্তু এতদিনেও করে দেয় নাই।
এর সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই আমি। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে কর্মক্ষেত্র সংকটের ফলে অনেকেই বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাকরি যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সুযোগে তোফাজ্জেল বিদেশে ভালো চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। এতে অনেকে বিদেশে চাকরি পাওয়ার আসায় লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
তোফাজ্জেল ও নাজমা এমন করে এলাকার অনেকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে তোফাজ্জেল তালুকদার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।