ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। যার ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। যুদ্ধের ফলে সরকার ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এমন অবস্থা শুধু বাংলদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও বিদ্যুৎসংকটে ভুগছে।
বাধ্য হয়ে অনেক দেশ অতি মূল্য জ্বালানী ও গ্যাস কিনছে, কেওবা আবার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকেই হাঁটছে।
অস্ট্রেলিয়ায় মাসখানেক আগে থেকেই প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। দেশটিতে লাখ লাখ নাগরিকের বাসাবাড়িতেই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের জানিয়ে দিয়েছে, নিউসাউথওয়েলস ও তাসমানিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতি দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। গত মাসেই সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, ৫টি রাজ্যেই বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎনির্ভর রাজ্য কুইন্সল্যান্ডও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্মরণকালের সবচেয়ে তীব্র বিদ্যুৎসংকট সামাল দিতে দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন ও শক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস বাউন জনগণকে সাশ্রয়ী ও সংযমী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে রুশ গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় ইউরোপের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানির শিল্প-কারখানাগুলো ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে। এমনকি সামনের শীতে নাগরিকদের বাড়িঘর গরম রাখতে বাড়তি বিদ্যুতের জোগান দেয়া সম্ভব হবে কি না তাও ভাবছে দেশটি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকেই হাঁটছে জার্মানি। দেশটির অর্থমন্ত্রী রোবার্ট হাবেক এই সংকটকে স্মরণকালের অন্যতম আখ্যা দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ফের সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে বাড়িঘর ঠান্ডা রাখতে নাগরিকদের কাঠ ব্যবহার করার অনুরোধ করেছে পোল্যান্ড সরকার এবং নাগরিকরা, যাতে সহজেই কাঠ সংগ্রহ করতে পারে, তার জন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটির সরকার। কয়লাসংকটের কারণেই এমন পদক্ষেপ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে দৈনিক লোডশেডিং ৮ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানি পত্রিকা ন্যাশনের প্রতিবেদনে এমনটাই জানা গেছে। দেশটির বিদ্যুৎ ঘাটতি এরই মধ্যে ৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদা ২৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, যেখানে দেশটি উৎপাদন করতে পারছে মাত্র ২২ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট।
এশিয়ার উন্নত দেশ জাপানও বিদ্যুৎসংকটে নাকাল। দেশটির চাহিদার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। যার মূল্য পরিশোধ করা হয় ডলারে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিশাল অঙ্কের অর্থ পরিশোধে বিপাকে পড়েছে গোটা দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতি উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটি। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান বিরোধের পরও দেশটি থেকে গ্যাস আমদানি টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল টোকিও। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় আরো সংকটে পড়েছে দেশটি।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্রাজিল ও ভারতের মতো অনেক দেশের বিদ্যুৎসংকটের নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জোর দিচ্ছে ভারত।
সামনের শীতকে কেন্দ্র করে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু ও জ্বালানিমন্ত্রী রব জেটেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর সব বিধি-নিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুধু বিদ্যুৎসংকটই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট ও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ না থামলে ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা না উঠলে শিগগিরই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই।