আষাঢ় শেষে শ্রাবণের আগমন, তবুও নেই বৃষ্টির দেখা। লালমনিরহাটে তীব্র তাপদাহে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জনজীবন। বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ গুলো। এই তাপদাহে আরও কিছুদিন এমন অসহনীয় গরম চলতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। টানা কয়েকদিনের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষরা। একই সঙ্গে অফিসগামী চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরাও পড়েছে চরম সংকটে। কাজের প্রয়োজনে যাদের বাইরে যেতে হচ্ছে তাদের দুর্ভোগ চরমে। এদিকে জুলাই মাসে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝে মধ্যে সুর্যের লুকোচুরি খেলা হলেও নেই বৃষ্টির দেখা। উল্টো গরমের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ লালমনিহাটের জনজীবন। লালমনিরহাট শহরের রাস্তাঘাট আনেকটা ফাঁকা তীব্র গরমে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দিনের রোদে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমে প্রতিটি পরিবারে দেখা দিচ্ছে জ্বর-সর্দি ও ডায়রিয়ার মতো অসুখ। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীদের সংখ্যা। এদিকে প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে বেশি বেশি পানি পান করার পাশাপাশি খুব প্রয়োজন না হলে রোদে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেলা শহরের ভ্যান চালক রবিউল হাসান বলেন, অসহ্য গরমে শরীর জ্বালাপোড়া করে, মাথা ঘুরায়।
মনে হয় এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে যাব। তারপরেও পেটের দায়ে সংসারের সদস্যদের খাওয়ার যোগান দিতে তাকে ভ্যান নিয়ে বাহিরে বের হতে হয়। অটো রিক্সা চালক সাহেব আলী বলেন, তার পরিবারে সাতজন সদস্য। তাদের ভরন পোষনের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তাই খুব সকালে অটো রিক্সা নিয়ে বাহির হয়ে যে কয় টাকা উপার্জন হয় তা নিয়েই ১০ টা বাজার সাথে সাথে বাড়িতে চলে আসি।
রোদের যে তাপ মনে হচ্ছে গায়ের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। এতে করে গত কয়েকদিনে তার সংসারে অভাব বেড়ে গেছে। যদিও ভ্যান পায়ে ঠেলতে হয়না তবুও রোদের কারণে রাস্তায় থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কি করবো বলেন, নিজে সুস্থ না থাকলে কাজ করবো কি করে? তাই কষ্ট করে হলেও সংসার চালাতে হচ্ছে। কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, গরমের কারনে বেচাকেনা দিনের বেলায় অনেক কমে গেছে।
দিনে মানুষ কম বের হচ্ছে বাসা থেকে। তাই সারাদিন দোকানের ফ্যানের নিচে বসে থেকে সময় কাটাতে হচ্ছে। এভাবে তীব্র তাপদাহ চলতে থাকলে তার ব্যবসা হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, এই ভরা বর্ষা কালে আমাদের মাঠে পানি নাই। আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণের আগমন হলেও তবুও নেই বৃষ্টির দেখা।
এ সময় আমন ধান লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করতে হয়। জমিতে পানি না থাকায় আমরা হালচাষ করতে পারছিনা। পানির অভাবে জমি ভেটে যাচ্ছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই অসহ্য গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী বেশি হয়। যদিও আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকের কোন রোগী আসেনি। তবে তাপমাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় জ্বর-সর্দি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ সময় সবাধানে চলাফেরা ও বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেছেন, সকালে দিকেই তাপমাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় লালমনিরহাটে অস্বাভাবিক গরম অনুভব হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শও দেন তিনি। দুপুরের পর কোনও অবস্থাতেই যেন বাইরে তাদের না থাকতে হয় সেভাবেই শিক্ষকদের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় বেশি করে পানি পান, ঠান্ডা জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন। কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া কার্যালয়ের তত্বাবধায়ক অপুর্ব রায় বলেন, সূর্য কিরণ লম্বালম্বিভাবে আসায় তীব্র গরম অনুভব হচ্ছে। বিশেষ করে গরম বাতাস মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করছে। এ তাপমাত্রা আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টি নেই। জুলাই মাসের এই গরম আরও সপ্তাহখানেক থাকবে। জুলাই মাসে লালমনিরহাটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।