গলাচিপার দুই ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনে ভেঙ্গে তিন গ্রাম সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। তেতুলিয়া আর আগুনমুখার গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এ দুই নদীর গ্রাসে আরো ১২ গ্রাম হুমকির মুখে।
বছর ঘুরতে না ঘুরতে গড়ে দেড় শ থেকে দু শ ফুট জায়গা নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। পানপট্টি ও রতনদীতালতলীর ওয়াবদা বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গন রোধ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত আশি বছরে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে পানপট্টির উড়িরচর, যুগীর হুলা ও ভাড়াই পাশা গ্রাম। অপরদিকে ভাঙ্গনের বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো নয়টি গ্রাম। গ্রামগুলো হলো, পানপট্টির খরিদা, লঞ্চঘাটের উত্তর (নতুন লঞ্চঘাট) পাশে গুপ্তের হাওলা, তুলাতলী, যুগীর হাওলাদা, চৌদ্দ আনী রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কাটাখালী, গ্রামর্দন, বন্যাতলী ও উলানিয়া গ্রাম। ফলে এসব এলাকায় বসতিরা আবাসন সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সরেজমিনে গলাচিপার পানপট্টি ইউনিয়নের পানপট্টি লঞ্চঘাট, গ্রামর্দন, রতনদী তালতলীর বদনাতলী এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানাগেছে। ওই এলাকার অন্তত ৫০ পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে ওয়াবদা বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে এসব ভাঙ্গন এলাকা দ্রুত কার্যকরী টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের দক্ষিণ পানপট্টি গ্রামের মোসাম্মাৎ সুফিয়া খাতুন বলেন, পানপট্টিতে আমাদের হাওলা ছিলো। যা নদীতে ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। দেখেছি আগুন মুখা ও তেতুলিয়া নদীর খরস্রোত।
দেখিছি নদী ভাঙ্গা মানুষের অসহায়ত্ব। আমার বিয়ে হয় প্রায় ৭০ বছর আগে। বিয়ের কিছুদিন পর তেতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া উড়িরচর গ্রামে নৌকায় যাওয়ার সময় একটি নৌকায় থাকা দুই জন পুরুষ, দুই শিশুসহ এক নারী নদী ভাঙ্গনের মাটির ধ্বসের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে। ওই স্মৃতি এখনো আমার চোখের উপর ভাসে। তবে যারা মারা গেছেন তাদের নামগুলো মনে আসছে না। তাছাড়া তারা আমাদের এলাকারও ছিলেন না।
পানপট্টির লঞ্চঘাট এলাকার চা দোকানী সবুজ হাওলাদার বলেন, গত পাঁচ বছর আগে পুরান লঞ্চঘাট এলাকায় দোকান ছিল। নদীর ভাঙ্গনে হেই দোকান ভাইঙ্গা যায়। হের (এর) পর এইহানে নতুন লঞ্চঘাট আবার ধার দেনা কইররা দোকান শুরু করি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় আবার ভাঙ্গন হলে এখন রাস্তার উপর চায়ের দোকান দেই। এবছর হয়তো এ রাস্তাটুকুও ভাইঙ্গা যাইবে। আর এই রাস্তাটুকু (ওয়াবদা বেড়ি বাঁধ) ভাইঙ্গা গেলে পাশের দুইটি গ্রামের অস্তিত্বই থাকবে না। আমাগো ত্রাণ লাগবে না। রাস্তাডা ঠিক কইররা দেউক। তিনি আরো বলেন, লঞ্চঘাট এলাকায় গত বছর ২০ জন দোকানদার ছিল। কিন্তু নদীতে ভাইঙ্গা যাওয়ায় এহন এহানে (এখানে) ১০ জন দোকানদার আছে। এর মধ্যে তিনই ভাঙ্গনে বন্ধ হয়ে গেছে।
দোকানদার রফিক সিকদার সব হারিয়ে অচল হয়ে ঘরে পড়ে আছে। নদী ভাঙ্গনের কথা মনে উঠলে অসাড় হয়ে যাই। আমাগো বাপ দাদাগো মুখে হুনছি, গত একশ বছরে আমাগে পানপট্টির প্রায় ৮ মাইল এলাকা নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। এতে কয়েক হাজার বাড়ি ঘর, মসজিদ, বাজারও আছে। গত ১৫ বছর আগে আমাগোই ৭০ একরেখর মতো ফসলী জমি আছিল। আমাগো এহন আর চাষের কোন জমি নাই। একই গ্রামের ফজলুল করিম বলেন, বর্তমানে পানপট্টি লঞ্চঘাট থেকে প্রায় আড়াই মাইল পূর্বদিকে পানপট্টির বসতী ছিলো।
সেখানে উড়িরচর নামের একটি গ্রাম ছিল। উড়িরচর না থাকলেও উড়িরচর নামের মরা খালটি পুরনো স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। রতনদীতালতলী ইউনিয়নের গ্রামর্দন এলাকার সোবাহন গাজী বলেন, রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বন্যাতলী থেকে পানপট্টি ইউনিয়নের দক্ষিণ পানপট্টি, তুলাতলীর ও লঞ্চঘাট এলাকা নদীতে প্রতিবছরই দুই তিন শ ফুট ভেঙ্গে যায়। গত বছর ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের ভাঙ্গনে গ্রামর্দন এলাকার নেছার হাওলাদার, কুদ্দুস মিয়া, শুকুর মিয়া ও ইলিয়াসহ অন্তত ৫০ জন নদী ভাঙ্গনে বাড়ি হারিয়েছে। তারা এখন ওয়াবদা রাস্তার উপর বসবাস করছে।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামন বলেন বলেন, গলাচিপার ভাঙ্গন এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। যেসব এলাকার বাঁধের স্লোপ ৪ মিটার আছে তা ছয় মিটার করা হবে। গলাচিপার বিভিন্ন পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে দ্রুত টেকসই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব কাজ গুরুত্বসহকা