পটুয়াখালীতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে পিআইওর ডানহাত ভুয়া ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা আত্মসাৎ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদানের লক্ষ্যে ২০২২ সালে ২য় পর্যায়ে বরাদ্দকৃত গৃহের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পের উদ্যোগটি সর্বমহল সাধুবাদ জানিয়েছেন। গ্রাম এলাকার ভূমিহীন ও দারিদ্র, এরফলে খেটেখাওয়া মানুষের চোখে মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা জনবান্ধব নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ভূমিহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত দুই রুমের ঘর উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলো পেয়ে গ্রামীণ জনপদের গৃহহীন মানুষরা অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য দেওয়া ঘর প্রাপ্ত উপকার ভোগীদের সাথে দেনদরবার করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার নাসির।
পটুয়াখালী সদর উপজেলায় বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে কর্মরত আছেন মোঃ রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও তিনি মির্জাগঞ্জ উপজেলায় পিআইও হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। আশ্রয়ন প্রকল্প ২য় এর আওতায় অর্থ বছরে পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ দুই উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য ১৪৬ টি ঘর নির্মাণ কাজ চলমান ।
প্রতিটি ঘরের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ২ লক্ষ উনষাট হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা ও উপকার ভোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে বেনামে টাকা পয়সা উত্তোলন ও জোড় করে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এমন অভিযোগে অনুসন্ধানে জানা যায়, পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার নাসির তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন। উপকার ভোগীদের উপর জোড় করে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। তারপরেও ঘরের নির্মাণ কাজ খুবই নিম্মমানের হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, পটুয়াখালী পিআইও অফিসের পক্ষে, আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘরের নির্মাণাধীন সকল মালামালের ক্রয়ের দায়িত্বে রয়েছেন কতিথ ইঞ্জিনিয়ার নাসির নামে একজন। পরে পটুয়াখালী পিআইও অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অফিসে নাসির নামে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। তবে কে এই নাসির?
নাসিরের বাড়ি বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায়। পিআইও রফিকুল ইসলাম ও কতিথ ইঞ্জিনিয়ার নাসিরের বাড়ি একই এলাকায়, যিনি পটুয়াখালী পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত। তিনি সরকারি কোন কর্মকর্তা না হয়েও, কিভাবে পরিচিত পেলেন এই নামে? এ বিষয়ে অনুসন্ধাণকালে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
পটুয়াখালী সদর উপজেলায় বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ রফিকুল ইসলামের সহপাঠী ছিলেন নাসির। নিজেকে স্বচ্ছ রাখতে নিজের বানানো ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার নাসিরকে দিয়ে করান সকল ধরনের অপকর্ম। অনুসন্ধানে আরও জানাযায়,পিআইও রফিকুল ইসলাম আগে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় পিআইও হিসেবে কর্মরত ছিলো।
কথিত ইঞ্জিনিয়ার নাসির, সেখানে তার সহযোগী হিসেবে ছিলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তিনি বলেন, শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্প না, পিআইও রফিকুল ইসলামের সকল ধরনের কামাইয়ের পুত এই নাসির। দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে নাসির পটুয়াখালী সদর উপজেলার পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত করান জনসাধারণের মাঝে। শুধু তাই নয়, ভোগ করে সরকারি উপজেলা অফিসের কোয়াটার। উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি কোয়াটারে বাসা নিয়ে থাকেন তিনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত উপকারভোগী মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া গ্রামে মরিয়ম আক্তার জোসনা বলেন, নানান অভিযোগ দেখিয়ে মালামালের দাম বাবদ পরিশোধ করার কথা বলে। আমি পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার নাসিরের কথায় মালামালের দোকানে সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। অসহায়, অসুস্থ ও আমার স্বামী নও মুসলিম বলা সত্বেও আমাকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয় নাই।
আরেক বয়স্ক বৃদ্ধ উপকার ভোগী নাসিমা বেগম বলেন, আমার ঘর বানানোর জন্য আমি বাড়তি ১৫ বস্তা সিমেন্ট কিনে দেই। এছাড়াও ফ্লোরের বালি ও ইট কিনে দেই। মোট ৭০ হাজার টাকা আমাদের খরচ হয়েছে । মালামাল পরিবহনের খরচও আমরা দিয়েছি। আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে তার পরেও আমাদের ঘরটি ভালো করে তৈরি করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের ঘর নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত নির্মাণ শ্রমিকেরা বলেন, আমরা তো আশ্রয়ণের ঘর তৈরি করি। নাসির ভাই আমাদের এনেছে, সে পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের সব কিছু দেখিয়ে দেয়। আমরা তার কথা মত কাজ করি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত নাসিরের সাথে কথা বললে তিনি মুঠোফোনে নিজেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দেন। আসলে পিআইও অফিসের ইঞ্জিনিয়ার কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি সদর উপজেলার পিআইও রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলেন। আমি এবিষয়ে কিছু বলতে চাইনা।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নাসির পিআইও অফিসের কোন বেতন ভুক্ত কর্মচারী না। তাকে আমি আমার স্বার্থের জন্য নিয়ে আসছি। তাকে আমি আমার সুবিধার জন্য কাজ করাই। সে কাজ ভালো বুঝে। সে স্টাফ না, কিন্তু নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে কিভাবে সরকারি কাজ করায় ও সরকারি কোয়াটারে কিভাবে থাকেন এমন প্রশ্নে, তিনি বলেন, আমি তাকে নিয়ে আসছি, কোথায় কোথায় কমিশন নিয়েছে, টাকা নিছে, সে তথ্য আপনি নিয়ে আসেন। আপনি নিউজ করেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা নাহিদ বলেন, আমি বিষয়টি আগে জানতাম না এবং এই নাসিরকে আমি চিনিনা। যদি সে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে থাকে। আমি বিষয়টি নিয়ে পিআইওর সাথে কথা বলবো। তারপর কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
https://www.youtube.com/watch?v=-lZevEme9RE