বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মত রায়ে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভেঙে দেওয়া জাতীয় সংসদকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
রায়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চালিয়ে যেতে হবে এবং কোনো সদস্যকে সংসদের অধিবেশনে যোগদানে বাধা দেওয়া যাবে না।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে এমন নাটকীয় পট-পরিবর্তনের মাঝে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকাল এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি আজ শুক্রবার তার মন্ত্রিপরিষদের সাথে বসবেন এবং জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের আদেশকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ মর্মে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়ে সংবিধানের ৫৮ ধারা লংঘন করেছেন। এ ধারায় বলা আছে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তা সমাধান না করে সংসদ বিলুপ্ত করা যায় না।
উচ্চ আদালতের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
কেন ইমরান খানের বিরোধিতা?
পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৌতিক সংকট, বৈদেশিক ঋণের বোঝা, রূপির মূল্য মান কমে যাওয়া এবং দুর্নীতির ব্যাপকতা ইমরান খানের জন্য নতুন সংকটের জন্ম দেয়। এর সাথে যুক্ত হয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইমরান খান চাইছে তার সরকার ও সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন আগাম নির্বাচন দেওয়া হোক। আর বিরোধীরা চাইছেন অনাস্থা ভোটে ইমরানের সরকার পতন হোক এবং বর্তমান সংসদের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোক। নতুন সরকার গঠিত হোক। মেয়াদ পুর্তি পর্যন্ত পার্লামেন্ট বহাল থাকুক।
ইমরানকে হটিয়ে বিরোধীরা যদি সরকার গঠন করে সেক্ষেত্রে ইমরান তার গণমূখী কৌশল অবলম্বন করে বিরোধিতায় নামবে এবং আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করবেন এটা অবধারিত।
এ অবস্থায় সকল পক্ষকে নিয়ে একটা সর্বসম্মত নির্বাচন অনুষ্ঠান বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তবে, অনেককিছুই নির্ভর করছে দেশটির সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেবে তার ওপর। রাজনৈতিক সংকট যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠে, তবে অতীতের মতো আরও একবার পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারে সেনাবাহিনী।