লালমনিরহাটে ২১ বছরেও নিজ জমি ফেরত বা দখলে না পাওয়ায় আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন আবু বক্কর সিদ্দিক নামে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ।
দীঘ ২১ বছরের ৭টি মামলার জট টানতে টানতে নিঃস্ব আবু বক্কর সিদ্দিক সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে সর্বশেষ ভরসাস্থল হিসেবে লালমনিরহাটে কর্মরত সাংবদিকদের নিকট এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে এসব বিষয় জানান।
সহজ-সরল তৎকালীন সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ছোট কমলাবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র এবং ১৯৮০ সালের সাবেক ইউপি সদস্য।
জানা যায়, কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় নির্মানের জন্য ১৯৮০ সালে আবু বকক্কর সিদ্দিক ৩০ শতক জমি দান করেন। ওই সময় বৃদ্ধ আবু বক্কর সিদ্দিকের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি জালিয়াতি চক্র ৭১.৫ শতক জমি লিখে নেয়। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয় নির্মান করা হয়নি।
পরবর্তীতে ওই বৃদ্ধ ৩০ শতক জমি বাদ দিয়ে তার অবশষ্ট জমি ফেরত পেতে আদালতে ২০০০ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৭টি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা লালমনিরহাট জেলা আদালত থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং সবকটি মামলার রায় জমিদাতা আবু বক্কর সিদ্দিকের পক্ষে আসে। এরপরেও উক্ত নালিশী জমি জমিদাতা তার জমি ফিরত বা দখলে নিতে পারছেন না।
এদিকে ওই জালিয়াতি চক্রটি সমুদয় (৭১.৫ শতক)জমি দখলে নিয়ে সেখানে দোকান-পাট নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন।
দফায় দফায় আদালতের রায় কার্যকর না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ কোর্ট ফি বিশ টাকা আবেদন সংযুক্ত একটি পত্র জেলা প্রশাসকের নিকট ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আত্মহত্যার আবেদন করেন।
প্রাপ্ত আবেদনে জানা যায়, অসহায় বৃদ্ধ নালিশী ৭১.৫ শতক জমি দানপত্রের দলিল বাতিল সত্বের মামলা করেন। আদিতমারী সহকারী জজ আদালতে অন্য নং- ১/২০০০। উক্ত মামলায় রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হলে আদালতের নির্দেশক্রমে মূল দানপত্র দলিল ও সাব রেজিঃ অফিস লালমনিরহাট এর উক্ত দানপত্র দলিলের ভলিওম সংশোধন করা হয়। পরর্বতীতে জেলা প্রশাসক ১/২০০০ নং- মামলার রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল নং- ৮৮/২০০০ দায়ের করিলে আদালত উক্ত আপীল খারিজ করে পূর্বের দেয়া রায় ডিক্রি বহাল রাখেন। জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ দায়ের করেন। হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় নালিশী জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা বেদখল করে নেন।
মহামান্য হাইকোর্ট ৪১.৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দী বর্ণনা করে পুনরায় রায় লেখার নির্দেশ দেন জেলা যুগ্ন জজ ২য় আদালত লালমনিরহাট কে। পরবর্তীতে গত-১৬/০৪/২০১৫ইং তারিখে পুনরায় জেলা যুগ্ন জজ ২য় আদালত ৪১.৫ শতক জমির সীমানা ও চৌহদ্দী বর্ণনা করে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। এরপর উক্ত রায় প্রাপ্ত জমি দখলে পাওয়ার জন্য ৩০/০১/২০১৯ইং তারিখে জেলা যুগ্ন জজ- ১ম আদালতে অবৈধ দখলদারদের বিবাদী করে খাস দখল মামলা ৩২/২০১৫ইং দায়ের করা হয়। এর পর পরই আদালত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের রায় দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক ২য় দফায় জেলা জজ আদালতে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করেন। যার নং- ৩১/২০১৯ এবং অন্য বিবাদীরা ৩৬/২০১৮ আপীল করলে জেলা জজ গত ২২/১১/২০২১ আপীল ২টি খারিজ করে দেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের রায় ডিক্রি বহাল রাখেন আদালত।
নালিশী জমি সিএস, এসএ, সর্বশেষ বিআরএস রেকর্ড ব্যক্তি মালিকানার নামে চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। নালিশী জমি নিয়ে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন নং- ২৯৫৬/২০০২ বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মোকছেদ আলী ও তাহার ভাই মোকলেছুর রহমানকে এক সণা লাইসেন্স দেন। যা দুই ভাই মিলে ২০ শতক জায়গা দখলে নিয়েছেন। আবার ৩২/২০১৫ খাস দখল মামলায় সরকার পক্ষের জবাবে ১/২০০০ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক দায়ের কৃত অন্য আপীল ৮৮/২০০০, সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক কর্তৃক দায়ের কৃত হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন ২৯৫৬/২০০২ মামলার বিষয় গোপন করে এবং নালিশী জমির মালিক না থাকা ও খাস খতিয়ান ভূক্ত করা হয়েছে। যা আদিতমারী থানাধীন জে,এল নং-৭৭, বড় কমলাবাড়ী মৌজার নালিশী সি এস নং- ৩০২ এস এ নং- ৩১৯, খতিয়ানের ১৬৬৫ নং দাগে ১.৪৩ একর মধ্যে আরজির হাত নকশায় চিহ্নিত .৪১ একর জমির দখল। বাদীর অনুকূলে অর্পণ করার জন্য বিবাদীপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত।
জমিদাতা আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি একজন নীরহ এবং সহজ সরল মানুষ হওয়ায় তাকে হয়রানি আর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমি আদালত থেকে ৭টি রায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হয়েও জমি ফেরত পাচ্ছি না। উক্ত নালিশী ৪১.৫ শতক জমি সরকারী সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ পূর্বক দখল ও নামজারীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও আদিতমারী সহকারী ভুমি কমিশনারের নিকট আবেদন করেছি। দীঘ ২১ বছরের মামলার জট টানতে টানতে আমি আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার এই বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছেন না। অন্যথায় আমি আমার পরিবারের সদস্যরা আত্মহত্যা বা যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সে জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা দায়ী থাকবেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আইনের মাধ্যমে সুবিচার চাই আমি।
আদিতমারী ভাদাই ইউনিয়ন ভুমি অফিসের ইনচার্জ মো. মমিনুল করিম চৌধূরী বলেন, আদালতে মামলা জটিলতার কারণে বর্তমান ওই জমির খাজনা আদায় করা হচ্ছে না। তবে যারা ওই জমি লিজ গ্রহীতা তারা ১৪২১ (বাংলা) সাল পর্যন্ত লিজের টাকা পরিশোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।