লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় স্ত্রী সাবিত্রী রানীর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নানা রহস্যের দানা বাঁদতে শুরু করেছে। সাবিত্রী রানীর স্বামী হিমাংশু রায় ও তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকাসহ এলাকাবাসীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে এ ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পুলিশ হেফাজতে স্বামীর আত্মহত্যায় চাপা পড়তে বসেছে স্ত্রীর ‘হত্যা রহস্য।
স্থানীয়দের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি পুলিশ হেফাজতে হিমাংশু রায়ের আত্মহত্যায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিলো কিনা তারও তদন্তের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে অনেকেই সন্দেহ করেছেন সবিত্রী হত্যায় তার স্বামী হিমাংশু রায় জড়িত থাকতে পারে। আর হিমাংশু রায়ের পিতা বলছে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। ছেলের মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ছেলে আত্মহত্যা করেছে তা মেনে নিয়েই সৎকার করেছি।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোর রাতে ওই এলাকায় বিশ্বেস্বর রায়ের পুত্র হিমাংশু রায়ের স্ত্রী সাবিত্রী রানী হত্যা কান্ডের শিকার হয়। সকালে হিমাংশু রায় প্রতিবেশীদের ডেকে বলেন, তার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা তার বাড়ি থেকে ৭২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রী তাদের বাঁধা দিলে ডাকাতরা তার স্ত্রীকে হত্যা করে চলে যায়। সকালে এসে আমি আমার স্ত্রীর লাশ পড়ে দেখি। পরের দিন সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং সন্দেহজনক কারণে ওই গৃহবধূর স্বামী হিমাংশু রায়কে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখলে ওইদিনই সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হিমাংশু রায়।
পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে হিমাংশু রায় জানান, তিনি পাশে এক অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে বাড়ি ফিরে তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকার কাছে জানতে পায় তার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে অনেক খোঁজাখুজি করে ঘরের পাশে তুলশী গাছের নিচে তিনি তার স্ত্রী সাবিত্রী রানীর লাশ দেখতে পায়।
তবে হিমাংশুর বড় মেয়ে প্রিয়াংকা জানান ভিন্ন কথা। তিনি কখনো বলেন বাবা রাত ১২টার দিকে বাড়িতে এসেছে তখন মা’সহ আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। আবার কখনো বলেন বাবা আসার আগে কালো কোর্ট পড়া একজন লোক এসে মাকে গলাটিপে হত্যা করেন। তাহলে সেই লাশ ঘরের বাহিরে কীভাবে গেল এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়াংকা জানান, তখন আমি ঘুমে ছিলাম।
এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, হিমাংশুর বাড়িতে মধ্য রাতে ডাকাতি হয়েছে এমন কোনো শব্দ বা কোন লক্ষ্মণ আমরা খুজে পাইনি। সকাল বেলা হিমাংশুর মুখে শুনি রাতে নাকি ডাকাতরা তার স্ত্রীকে হত্যা করে টাকা নিয়ে গেছেন।
তবে হত্যার শিকার সাবিত্রী রানীর ভাই খগেন চন্দ্র বলেন, আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। ভাগ্নী দুইটির ভবিষ্যত চিন্তা করে এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করতে চাই না। আমরা নিজেদের মধ্যে মিমাংসা করে নিয়েছি। তবে আমার বোনের হত্যার সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এবিষয় লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, সাবিত্রী হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে হিমাংশু রায়ের আত্মহত্যার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।