পটুয়াখালীর গলাচিপায় সেলাই মেশিনে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে অসহায় জীবন সংগ্রামী পারভিন বেগমকে।
পারভিন বেগম (৩৫) হচ্ছেন উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল রহিম খার মেয়ে। মনের প্রবল শক্তি ও সাহস নিয়ে প্রতিনিয়ত সেলাই মেশিনে পা চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। অভাবকে জয় করার প্রবল মনোবল নিয়ে তিনি সেলাই কাজ শিখে একটি পুরাতন সেলাই মেশিন কিনে প্রতিবেশির জামা-পায়জামা তৈরি করে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন।
সাংসারের চাকা সচল রাখতে অবিরাম সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছেন পারভিন বেগম। তাঁর ২ ছেলে রয়েছে। স্বামী তার ও ছেলেদের খোঁজ খবর না রাখায় বাধ্য হয়ে বাবার সংসারে থেকেই সংসারের হাল ধরেছেন সেলাই মেশিনের কাজ করে। স্বামী ঢাকা থাকলেও তার কোন খরচ দেন না। ঢাকা থাকা অবস্থায় এক মহিলার কাছে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে বাবার গ্রামের বাড়ি এসে মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। ধীরে ধীরে এলাকার ছেলে-মেয়েদের নতুন পোশাক তৈরির কাজে হাত দিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। তার বড় ছেলে মো. তাহসিন পশ্চিম গোলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।
আর ছোট ছেলে মো. ইসান গোলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র। জীবন সংগ্রামী পারভিন বেগম জানান, সেলাইয়ের কাজ করে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করেন। গ্রামের মানুষ বেশিরভাগ দরিদ্র হওয়ায় তেমন টাকা পাওয়া যায় না। ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। তিনি আরো জানান, আমার বাবা আমাকে রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে বিবাহ দেয়। আমার স্বামী আমাকে প্রায়ই মারধর করত। আমার স্বামী আমার তেমন খোঁজ খবর না নেওয়ায় ছেলে দুটোকে নিয়ে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে পড়ে আছি।
এ বিষয়ে পারভিন বেগমের বাবা আবদুল রহিম খা জানান, আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকে। সেলাই মেশিনের কাজ করে আমার নাতি দুটোকে স্কুলে পড়ালেখা করায়। সরকারিভাবে যদি ওকে আর্থিক সহযোগিতা করা হতো তাহলে ও আরো ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারত। তিনি আরো বলেন, শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অসহায় মানুষদের ঘর দেয়। যদি আমার মেয়েকে একটি ঘর দেত তাহলে ছেলে দুটোকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারত। এ বিষয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আফসার মিয়া বলেন, আসলেই পারভিন বেগম অসহায় ও হত দরিদ্র।
বাবার বাড়িতে থেকে সেলাই মেশিনের কাজ করে ছেলে দুটোকে মানুষ করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিন হাওলাদার বলেন, পারভিন বেগম স্বামীর বাড়ি থেকে প্রায় সাত আট বছর আগে চলে এসেছে। এখন বাবার বাড়িতেই থাকে। আসলেই পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারি সহায়তা ওদের প্রয়োজন।