লারমনিরহাট জেলা সিমান্ত অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। অবহেলিত বিশাল এ দরিদ্র জনগোষ্টির বেশির ভাগই কৃষক। এখানে নেই কোন ভাল মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা, না আছে কোন ভাল মানের কোন অত্যাধুনিক হাসপাতাল।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলার অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে বাহারি নামে ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার। এর মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাট জেলার প্রান কেন্দ্র মিশোনমোড়ে অবস্থিত ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টার।
বাহারি নামে বাহারি বিজ্ঞাপনে অসু্স্থ্য মানুষকে আকৃষ্ট করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারনায় একধাপ এগিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির জুড়ি মেলা ভার। এখানে পরীক্ষা না করেও যে কোন পরীক্ষার পাওয়া যাচ্ছে রিপোর্ট।
কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির ভিতরের চিত্র ভিন্ন। নেই কোন ভাল মানের সার্টিফিকেট ধারি টেকনিশিয়ান। নেই কোন ভাল মানের মেশিন।ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারটি চলার জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে সেকানে নিয়ে এসে বসিয়ে রাখেন।
কয়েকজন ডাক্তারের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারটি সকাল থেকে রাত অবধি চলে রোগী দেখার কাজ। শনিবার (৩০ জুলাই) বিকালে ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারে হাজিগঞ্জ এলাকার আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি তার ৮ বছরের শিশু সন্তান রাফিকে নাক,কান,গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ হুমায়ুন কবির আহম্মেদের কাছে নিয়ে আসেন।
ডাঃ হুমায়ুন কবির রাফিকে দেখে কিছু টেষ্ট দেন। তার মধ্যে এক্সরে করাতেও বলেন। সব গুলো রিপোর্ট করতে নেয়া হয় রক্তের স্যাম্পুল। কিছুক্ষন পর আশরাফুল ইসলামকে ডেকে ধরিয়ে দেয়া হয় রিপোর্টের কাগজ। সাথে ছিল এক্সরে রিপোর্ট। কিন্তু তখন পর্যন্ত শিশু রাফির এক্সরে করানোই হয়নি, অথচ হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো এক্সরে রিপোর্ট।
শিশু রাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম রিপোর্ট গুলো নিয়ে ডাঃ হুমায়ুন আহম্মেদের কাছে প্রেসক্রিপশন করাতে গেলে ডাঃ বলেন, এটা কার এক্সরে আমিতো নাকের এক্সরে করাতে বলেছি। তখন ডাঃ হুমায়ুন আহম্মেদ শিশু রাফিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন বাবু তোমার কি এক্সরে করানো হয়েছে।
তখন রাফি বলে আমিতো এখানে বসে ছিলাম আমার শুধু রক্ত নিয়েছে। কোন এক্সরে করায়নি। পরে রাফির বাবা ক্রিসেন্ট ডায়াগানোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক মাজেদের কাছে অনিয়মের কথা বলতে গেলে বিচ্ছিরি ভাষায় গালিগালাজ করেন ও চেয়ার তুলে মারতে যান এবং বলেন, বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য তাকে অনুরোধ করেন।
শিশু রাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, রিপোর্টের ব্যাপারে ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারের মালিক মাজেদুল ইসলাম মাজেদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি রেগে গিয়ে তাকে চেয়ার তুলে মারতে যান এবং বলেন আমি যে রিপোর্ট দিয়েছি সেটাই সঠিক। যদি ডাঃ সাহেব না বুঝতো তাহলে আমার ছেলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।
আমি ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারের মালিক মাজেদুল ইসলাম মাজেদের বিচার চাই। এ ব্যাপারে ক্রিসেন্ট ডায়াগনোষ্টিক ও ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক মাজেদুল ইসলাম মাজেদ বলেন, ভাই ভুলে রিপোর্টটা তাকে দিয়ে ফেলেছি এজন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থী।
আর চেয়ার তুলে মারতে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।