লালমনিরহাটে পাটক্ষেতে পাওয়া জেলেখা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে লালমনিরহাট থানা পুলিশ। পরকিয়া এবং শেষে বিয়ে করার কথার কারনেই জেলেখাকে জীবন দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিহত জেলেখার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলাটি রুজু করে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
মামলাটি তদন্তকালে নিহত জেলে এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের সিডিআর পর্যালোচনা করে সদর উপজেলার তিস্তা পাঙ্গাটারী গ্রামের দিনেশ চন্দ্র বর্মনের ছেলে বিধান চন্দ্র বর্মন (২৬) ও সুদর্শন বর্মনের ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতালকে(২১)কে গ্রেফতার করে পুলিশ৷
সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে হত্যা মাৃলার রহস্য উদ্ঘটনের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলমসহ জেলায় কর্মরত ইলেক্ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
নিহত জেলেখার প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হওয়ার পরে কুড়িগ্রাম জেলার মনঞ্জুরুল নামে এক ব্যক্তির সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর জেলেখা জানতে পারেন যে, স্বামী মনঞ্জুরুলের সে ৬ষ্ঠ স্ত্রী।
সে কারণে ২য় স্বামীর সাথে রাগ করে তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। এরপর বাবার বাড়ির পাশেই বিধান চন্দ্র নামে একজনের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সেই সম্পর্ক পরে শারীরিক সম্পর্কে পৌছায়। বিধান চন্দ্র তার স্ত্রীকে ঘন ঘন বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে জেলেখাকে নিয়ে রাত্রিযাপন করতো। ঘটনার দিন মঙ্গলবার (২২জুন) রাতে জেলেখা তার স্বামী মঞ্জুরুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম যাচ্ছে বলে তার মাকে বলে বিধান চন্দ্রের বাড়িতে রাত্রিযাপনের করেন এবং জেলেখা ওই রাতে বিধানের শয়ন ঘরে অবস্থান করে।
ওইদিন দিবাগত ভোর অর্থাৎ ২৩জুন ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জেলেখা আসামী বিধানকে তাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে যাবে কিনা জানতে চায়।
বিধান পূর্বের ন্যায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে জেলেখা আশপাশের লোকজনদেরকে ডাকাডাকি করার চেষ্টা করলে আসামী বিধান তার ঘরে থাকা কাঠের ফলা (লাঠি) দিয়ে জেলেখার মাথার পিছন দিকে আঘাত করে।
পরে বিধান তার ঘরে থাকা দাঁ এর ধারালো মাথা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার কপালে স্বজোড়ে কোপ মারে এবং গলা চেপে ধরে জেলেখাকে হত্যা করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে তার লাশ খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে সকালে তার কাজে যায়। কাজ শেষে তার কর্মচারী গ্রেফতারকৃত আসামী শ্রী সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতালকে নিয়ে তার বাড়ীতে আসে এবং হরতালের সহযোগীতায় লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরদিন বুধবার ২৩জুন গভীর রাতে বাড়ি থেকে একটু দুরে একটি পাট ক্ষেতে জেলেখার লাশ ফেলে আসে।
পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ধারনা করে নিহত জেলেখার মরদেহ গুম করতে ঘটনাস্থলে অপরাধীরা ফেলে যায়। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
চলতে থাকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের চেষ্টা। এর দুদিন না যেতেই রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে হত্যার সাথে জড়িত বিধান চন্দ্র ও সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে বিধান চন্দ্র জেলেখাকে হত্যার দায় স্বীকার করে। পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় যে, মোবাইল ফোনে আসামী বিধান চন্দ্র রায়ের সাথে জেলেখার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা চলে।
বিধান চন্দ্র ও জেলেখার বাড়ি একই ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রামে। সেই সূত্রে বিধান এর স্ত্রী বাড়ীতে না থাকার সুযোগে জেলেখা তার বাড়ীতে আসে এবং রাত যাপন করে। পরেভোরের দিকে জেলেখা তাকে বিয়ের চাপ দিয়ে চিল্লাচিল্লি করতে গেলে তাকে হত্যা করে বিদান।