তিস্তা অধ্যসিত লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নে প্রতি বছর বর্ষা আসলেই বাধ ভেঙ্গে পানিতে প্লাবিত হয় গোটা ইউনিয়ন। ইউনিয়নবাসী এবার সে পানি থেকে রক্ষা পেতে বর্ষার আগেই নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছিলেন ৪শত মিটারের একটি বালুর বাঁধ।
আশা ছিল, বাঁধের কল্যাণে এ বছর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবেন তারা। কিন্তু বন্যা আসার আগেই তাদের সে স্বপ্ন তলিয়ে গেল তিস্তা নদীর পানিতে।
এ যেন খরার উপর মরার ঘা। পরিবারের লোকজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন ওই ইউনিয়নের কুুটিরপাড়ের মানুষগুলো। উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, গত এক সপ্তাহে তিস্তা নদীর পাড়ের এ বালুর বাঁধটির প্রায় ২শত ৫০ মিটার ধসে গিয়ে তিস্তার বুকে বিলীন হয়েছে।
এতে বালুর বাধ এলাকার কয়েকটি বাড়ি নদীর পানিতে মিশে গেছে। ভাংঙ্গন আতঙ্কে ৪৫টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বসতভিটা বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আরও শতাধিক পরিবার। দক্ষিণ বালাপারা কুটির পাড় এলাকার দুলাল মিয়া জানান, বালুর বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি ও কমে এতে তিস্তা নদী আমার বাড়ি ভিটা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।
আমার থাকার শেষ সম্বলটুকুও শেষ। একই এলাকার জোবেদ আলী বলেন, ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে হারি করে টাকা দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করেছি।
প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এক মাস ধরে কাজ করে বাঁধটি নির্মাণ কাজ চলে বর্ষার আগে সব শেষ হয়ে গেল। একই গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ,জানান, বাঁধের যে অংশটি এখনো নদীগর্ভে চলে যায়নি, সেটি রক্ষা করা গেলে গ্রামবাসীর ভাঙন আতঙ্ক কিছুটা কমবে। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে পানি উন্নয়ন র্বোডের কর্মকতাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, জিও-ব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কয়েকবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি।
তারা যথা সময়ে ব্যবস্থা নিলে এই পরিবারগুলি এমন দশা হতনা। বালুর বাঁধটি ধসে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে এখনো রয়েছে শতাধিক পরিবার।
এবিষয়ে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দায় না নিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন, বালুর বাঁধটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এটির পক্ষে ছিল না। বন্যা শুরুর আগেই বাঁধটি ধসে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বালুর বাঁধটির অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে খুব দ্রুত জিও-ব্যাগ ফেলে বাঁধের বাকি অংশ রক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।