সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়। এ দায়ভার সাধারণ মানুষেরও। উচ্চ আদালত, সরকারি, বেসকারি সব প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাক্ষেত্রসহ সর্বস্তরে বাংলা চালু করার আহবান ভাষা সৈনিক, ইতিহাসবিদ ও কথাসাহিত্যিকদের। তাদের মতে, বাংলা ভাষার মান রাখার মানে দেশের মান রাখা।
স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কথাটা যেন বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও কিছুটা মিলে যায়। যখন মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাইল পাকিস্তানী শাসকরা; তখন এদেশের ছাত্র জনতা গর্জে উঠেছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার চাই- বলে। ভাষা শহীদদের জীবনের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হল। কিন্তু সবাই যেন ভুলে গেল সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের কথা।
২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসকদের ভাষাকেই মনে হল বেশি আধুনিক। তাই ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ব্যবহৃত হয় ইংরেজী ভাষা। ব্যাংকের কাজ চলে ইংরেজীতে। সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ কাগজে, উচ্চ শিক্ষায় ভীনদেশী ভাষার দাপট। যা কাম্য নয় বলে মনে করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়; সাইনবোর্ড লিখতে হবে বাংলায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। দোকান-পাটের নাম ইংরেজীতে। বড় বড় অনেক খাবারের দোকানের তালিকাও লেখা কেবল ইংরেজী ভাষায়।
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলছেন, মন থেকে উপনিবেশ দূর করতে না পারলে হবে না। ভাষার মর্যাদা এখনও আমরা বুঝিনি। এজন্যই সাইনবোর্ড ইংরেজিতে। তবে বাংলায় সাইনবোর্ড ব্যধ্যতামূলক করা উচিৎ।
জাপান, চীন, ফ্রান্স, স্পেন নিজের ভাষায় উচ্চ শিক্ষা নেয়। কিন্তু বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্রসহ অন্য বইগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করতে আমাদের আপত্তি।
ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক বলছেন, সকল ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা ব্যবহার আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন পরাধীন থাকায় বাঙালীর মধ্যে আছে হীনমন্যতা। তাই হয়ত পুরোনো শাসকের ভাষাকে বাংলায় মিশিয়ে বলতেও আমাদের বেশ লাগে। তাদের মতে, মায়ের ভাষার মান যারা রাখতে পারেন না তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখা্ উচিত নয়।