সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

বান্ধবীদের কাছেই পিকে হালদারের ৮৬৭ কোটি টাকা

নিজেস্ব প্রতিবেদক।
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৪৩৪ সময় দর্শন

বিদেশে পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তার বান্ধবীদের অ্যাকাউন্টে টাকা গেছে। পিকে হালদারের ১৫ বান্ধবী ও ঘনিষ্ঠ নারীদের ব্যাংক হিসাবে অন্তত ৮৬৭ কোটি টাকার সন্ধান  পাওয়া গেছে। উপহার, গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনে দেয়া, দেশে-বিদেশে ভ্রমণসহ বিভিন্ন অজুহাতে ঋণের নামে তাদের এ অর্থ দেয়া হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

কখনো ঋণের নামে, কখনো বিনোদন ভাতার নামে আবার কখনো অবৈধ টাকা আড়াল করতে পিকে হালদার অবৈধ উপারে এসব কাজ করেন। কোনো কোনো বান্ধবীর নামে ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর ছাড়াও ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি কিনে দিয়েছেন। আবার কাউকে দেশে-বিদেশে পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে আনন্দ-ফূর্তিও করেছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধান শুরু হলে পিকে হালদারের এক বান্ধবী দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যান। তিনি এখন পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রণেই ওই দেশে আছেন। বান্ধবীদের নামে অর্থকড়ি খরচের পাশাপাশি  নিজেকে আড়ালে রাখতে আর্থিক জালিয়াতিতে পিকে হালদারের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও সহকর্মীদেরও ব্যবহার করেন।

বিএফআইইউ, দুদক ও অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালের নামে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকার একটি ফ্ল্যাট (বাড়ি নং-৩৯, রোড নং-১০/এ) কিনে দেন। অবন্তিকা তার আয়কর নথিতে ওই মূল্য প্রদর্শন না করে গোপন করেন। তার ব্যাংক হিসাবেও ১০ কোটি টাকার বেশি স্থানান্তর করা হয়। যা চারটি আর্থিক খাত থেকে হাতিয়ে নেন পিকে হালদার। পিকে হালদারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ গুরুতর অভিযোগে অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করেছে দুদক।

শিমু রয় নামে তার আরেক ঘনিষ্ঠ নারীর নামে ৬৫ কোটি টাকা সরানো হয়। অবশ্য এ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য রেপটাইলস ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এ টাকা নেয়া হয়। নাহিদা রুনাই ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্সের হেড অব বিজনেস। তার কথায় চলত ওই প্রতিষ্ঠান। তার কথায় অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণের নামে কোটি কোটি টাকা বের করে দেয়া হয় বলে বিএফআইইউর কাছে তথ্য রয়েছে। তার নিজের হিসাবেওকয়েক কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক।

পূর্ণিমা রানী নামের একজনকে এমটিবি মেরিন লিমিটেড নামক কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে দেন পিকে হালদার। হলি নামে একজনকে ৭০ কোটি টাকা তুলে দেয়া হয়। আরেক নারী অবনিতার নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে ৮৪ কোটি টাকা তুলে দেন পিকে হালদার।

তার বান্ধবী সুপ্তি চৌধুরীর নামেও বিপুল অর্থ সরানো হয়। তিনি কিছুদিন আগে গোপনে কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে পিকে হালদারের আশ্রয়ে আছেন তিনি। ঋণের নাম করে শাহনাজ নামে এক নারীকে ৬০ কোটি টাকা, সুস্মিতাকে ৬২ কোটি টাকা, সামিয়া বেগমকেও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ দেন পিকে হালদার। অনিন্দিতা মৃধা নামে এক নারীকে উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকানাবিহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি টাকা কৌশলে তুলে দেন। তার ঘনিষ্ঠ অতশীকে দেন ৮০ কোটি টাকা।

পাপিয়া নামক এক নারীকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংরে পরিচালক দেখিয়ে আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএস থেকে ১২০ কোটি টাকা তুলে দেন। শুভ্রা রানী নামে এক নারীকে ৮০ কোটি টাকা দেন। সুস্মিতা নামে এক নারীকে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দেখিয়ে ৭০ কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে দেন পিকে হালদার। লামিয়া নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এক নারী সহকর্মীকে তিনি ঘুরতে নিয়ে যেতেন। পাঁচ তারকা হোটেলে তাকে নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করতেন পিকে হালদার। সুন্দরী ওই তরুণী দুদকের কাছে জবানবন্দিতে তা স্বীকারও করেছেন। একই ভাবে সজিয়া রহমান নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আরেক সুন্দরী তরুণী সহকর্মীকে বিভিন্ন মদের পার্টিতে নিয়ে যেতেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়। পিকে হালদার তার অবৈধ অর্জিত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বান্ধবীসহ ঘনিষ্ঠদের নামে সরিয়ে নেন। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এ বছরের ৮ জানুয়ারি ঢাকার একটি আদালত এ নোটিশ জারির নির্দেশ দেন।  এর আগে ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা লীলাবতি হালদারসহ ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া দুদক থেকে ৮৩ জনের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রেখেছে দুদক।

পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতেই পিকে হালদার বিদেশ পালিয়ে যান। গত বছরের ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় দুই দফায় পিকে হালদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়। তবে আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়স্বজন চক্রের মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রীয় দুটি প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে।

এদিকে পিকে হালদার এবং তার সহযোগী ও ৩৯ প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে দুদক। এসব টাকা পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত ছিল। বিএফআইইউর সহযোগিতায় দুদক এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফ্রিজ করেছে।

কে এই পি কে হালদার

পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তাঁর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পি কে হালদার ও প্রিতিশ কুমার হালদার—দুই ভাই–ই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে, যার অন্যতম পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার। কলকাতার মহাজাতি সদনে তাঁদের কার্যালয়।

আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাদের।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71