প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পার্বত্য জেলা বান্দরবানে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাহাড়ে বর্ষায় সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা।
জেলার অন্তত দেড় শতাধিক ইট ভাটায় মাটির জন্য সাবাড় করা হচ্ছে অসংখ্য সবুজ পাহাড় ও ফসলী জমি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন উন্নয়নের জন্য ইটভাটা প্রয়োজন।
তবে ব্যঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটার কারনে পাহাড়ের প্রকৃতির সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে এবার গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা। সবগুলো ভাটা স্কুল, জনবসতী গ্রাম, খালেরপাড় এবং সড়কের পাশে তৈরী করা হয়েছে।
চলমান বর্ষার শুরু থেকে এই ইটভাটাগুলো এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুদ করেছে। এখনো চলছে পাহাড় কাটার কার্যক্রম।
আর একমাস পরেই এই ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধুলাবালুতে বর্ষার সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ।
ফাইতং ইউনিয়নের মে অংপাড়ার বাসিন্দা উসিংমং মারমা ও কাইনতিং মারমা বলেছেন, শুধু এ বছর নয়, কয়েক বছর ধরে কাটতে কাটতে পাড়ার পাহাড়টি এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে।
তিনি আরো জানান, যেভাবে দিন-রাত অবিরাম কাটা হচ্ছে, তাতে এ বছর আর এ পাহাড়ের অস্তিত্ব থাকবে না। পাহাড়টি পাড়াবাসীকে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করত। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী। পাহাড় কাটতে বাধা দিলে তাঁরা মামলা-হামলার হুমকি দেন।
শুধু ফাইতং নয়, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, সোনাইছড়ি, কাগজিখোলা ও লামা-আলীকদম উপজেলায় বর্ষা মৌসুম এলেই ইটভাটার জন্য পাহাড় কাটা শুরু হয়।
গত বছর বর্ষা মৌসুমেও পাহাড় কাটা হয়েছে। এরপর বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে পাহাড় কাটা। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন- ইট পুড়ানো মৌসুম এলে ঘুমধুমের কয়েকটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ে।
অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন তৎপর হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
এদিকে পাহাড় কাটার অভিযোগে গত সপ্তায় লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও লামা উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয়টি ইটভাটাকে চার লক্ষ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোঃ রেজা রশীদ।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর এর সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেছেন- অবৈধ পাহাড় কর্তন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬খ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে ফাইতং এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে পিবিসি ব্রিক্স মালিক সামাদ আলী, এবিসি ব্রিক্স মালিক মোঃ জাফর উল্লাহ, এফবিএম ব্রিক্স মালিক মোঃ আমিনুল ইসলামসহ প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে এবং বিবিএম ব্রিক্স মালিক মোঃ ওমর ফারুক ৫০ হাজার টাকা, এসবিডব্লিউ ব্রিক্স মালিক মোঃ ফারুক মিয়াকে ৩০ হাজার ও এফএসি ব্রিক্স এর মালিক মোঃ জাফর আলমকে ২০ হাজার জরিমানা করা হয়।