ভারত ও চীনের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত চীনের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে সেনা অভিযান চালানো হবে। আজ (সোমবার) জেনারেল রাওয়াতের ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসায় ভারত-চীন বিবাদে তা নয়ামাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে যদি সেনা এবং কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে সেনা অভিযানকেই বিকল্প পথ হিসেবে বেছে নেব আমরা।’
লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সমগ্র বিষয়টি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল পর্যালোচনা করছেন বলেও জানান রাওয়াত। গত (শনিবার) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভালের সঙ্গে তিনবাহিনীর প্রধানদের সাথে উচ্চস্তরের সংলাপের পরে সিডিএসের ওই বিবৃতি প্রকাশ্যে এলো। ওই বৈঠকে সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতও উপস্থিত ছিলেন।
জেনারেল রাওয়াতের মতে, দেশের সেনাবাহিনী যেকোনও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, গত তিনমাস ধরে চীনা সেনাবাহিনী পূর্বলাদাখ অঞ্চলের এলএসি বরাবর ফিঙ্গার এরিয়া, হট স্প্রিংয়ের মতো বিতর্কিত অঞ্চলগুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে সামরিক ও কূটনৈতিকস্তরে এক ডজনেরও বেশি বৈঠকের পরেও চীনা সেনাবাহিনী পিছু হটতে প্রস্তুত নয়।
২০১৭ সালে চীনা সেনার সাথে ডোকলামে ৭৩ দিন পর্যন্ত চলা বিবাদের সময় ভারতের সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। কিন্তু ডোকলাম এবং লাদাখ দু’টোর পরিস্থিতি ভিন্ন। ডোকলামের থেকে অনেক বেশি উত্তেজক লাদাখের পরিস্থিতি। ভারত কোনোভাবেই লাদাখ থেকে পিছু হটবে না তা আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। চীনকে কড়াবার্তা দিতে লাদাখে কয়েক হাজার সেনার পাশাপাশি অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধ বিমানও মোতায়েন করেছে ভারত। একইভাবে চীনও সীমান্ত এলাকায় সেনাসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করায় সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে।
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মন্তব্য প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ান আব্দুল গনি কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল আজ (সোমবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতসহ বিশ্বের অর্থনৈতিক যা অবস্থা সে সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই অবগত। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা কী অবস্থায় দাঁড়িয়েছে তা সরকার ভালোকরেই জানে। কেন্দ্রীয় সরকারের গত ৬ বছরের শাসনামলে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই বিধ্বস্ত তা আমরা সকলেই জানি। এরকম পরিস্থিতিতে সীমান্তে যে উত্তেজনা চলছে সেই উত্তেজনাকে থামানোই হচ্ছে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সিডিএস বিপিন রাওয়াতের যে মন্তব্য তাতে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতিতে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় আমাদের যুদ্ধ করার থেকে শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। শান্তিস্থাপনে প্রাথমিক যেসব পদক্ষেপ আছে তা আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত উভয় দেশকেই। তারপরে যদি যুদ্ধ করতেই সেটা শেষ পথ হতে পারে।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম কথাবার্তা (মন্তব্য) আসলে বাজার গরম করা ছাড়া আর কিছুই না’ বলেও অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল মন্তব্য করেন।