ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবে ভেবে ধর্ষকরা ধর্ষিতাকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয় নদীতে। এরকম ঘটনায় সরাসরি জড়িত হিসাবে তিন আসামি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। কিন্তু গণধর্ষিত সেই স্কুলছাত্রী এখন জীবিত ও উপস্থিত হয়েছেন থানায়! ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায়। পুরো ঘটনায় এখন বিব্রত নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
জানা গেছে, গণধর্ষণের পর হত্যা করে স্কুলছাত্রীর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছিল বলে তিন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। এর ১৪ দিন এবং নিখোঁজের ৪৯ দিন পর সুস্থ অবস্থায় জীবত ফিরে এসেছে ওই স্কুলছাত্রী। আর তিন আসামি এখনো নারায়ণগঞ্জ কারাগারে জেল খাটছেন।
রবিবার বিকেলে বন্দর থানার নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে ওই স্কুলছাত্রীকে তার মা-বাবা উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
ওই স্কুলছাত্রী জানান, সে নিজে প্রেম করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তারা বন্দরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছিল।
ওই স্কুলছাত্রী মা জানান, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার ইকবাল নামে একটি ছেলের সাথে তার মেয়ে গত দেড় মাস ছিল। তাকে বিয়ে করে তারা সেখানে ছিল বলে জানান তিনি।
গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী (১৩)। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজ জিডি করেন মা।
আর ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। মামলায় উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে ওই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগিরা। এরপর থেকেই আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই।
মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ ওই স্কুলছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করত।ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা।
স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, পঞ্চম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
আসামিদের বরাত দিয়ে ওই সময় পুলিশ জানায়, স্বীকারোক্তি দিয়েছে ওই স্কুলছাত্রী হত্যা মামলার ৩ আসামি আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমান। আদালতের নির্দেশে তারা এখন জেলখানায় বন্দী।
বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আটক করা হয় অটোরিক্সা চালক রকিবকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয় থানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ আগস্ট অপহরণ মামলা রুজু হয় থানায়। অতঃপর আটক করা হয় আব্দুল্লাহকে। এরপর রকিব ও আব্দুল্লাহকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়। এরপর নতুন তথ্য পাওয়া যায় আব্দুল্লাহর কাছ থেকে।
ইস্পাহানী ঘাট থেকে ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে আব্দুল্লাহ একটি ছোট বৈঠা চালিত নৌকা ভাড়া করেছিল রাত অনুমানিক নয়টায়। ১২টার মধ্যে ওই স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল শীতলক্ষ্যাতে, সাহায্য করেছিলো মাঝি খলিল।
ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তবে এর আগে গ্রেফতারকৃত তিনজনের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে নাটকীয় এ ঘটনায় পুরো পুলিশ প্রশাসনের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। পুরো ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার পালা।