করোনাভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। তছনছ হয়ে গেছে বিশ্বের বড় বড় দেশের অর্থনীতি। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সব দেশে। করোনায় প্রাণ হারাচ্ছিল হাজারো মানুষ। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষকে করোনাবিষয়ক সচেতনতা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য বুলেটিনে নিয়মিতভাবে তথ্য উপস্থাপন করতেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটায় বুলেটিনে কথা বলতেন তিনি।
এদিকে ব্রিফিং শুরুর ছয় মাস চার দিনের মাথায়, অর্থাৎ আজ ১২ আগস্ট বুধবার থেকে আর হচ্ছে না বুলেটিনটি। গতকাল মঙ্গলবার অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বুলেটিনে অংশ নেন। তিনি সেখানে ঘোষণা দেন লাইভ স্বাস্থ্য বুলেটিন বন্ধের।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনা-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হবে গণমাধ্যমকে। তবে করোনা-সংক্রান্ত নানা তথ্য নিয়মিত গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে এখনো দেশে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। এমন সময়ে হঠাৎ কেন বুলেটিন বন্ধ করা হচ্ছে? এ প্রশ্নে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম জানান, ‘অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বিরতিহীনভাবে চার মাস ধরে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিদিন মৃত্যুর সংবাদ দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত। উনি আর পারছেন না। প্রেশারের ওষুধ খাচ্ছেন নিয়মিত। তাই বুলেটিনে অংশ না নিতে তিনি আমাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘নাসিমা সুলতানার ওই চিঠির কথা আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। পরে মন্ত্রণালয় লাইভ বুলেটিন সাময়িক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব সময়ের নির্দেশনা ছিল, সিনিয়র কর্মকর্তাকে দিয়ে যেন স্বাস্থ্য বুলেটিন পরিচালনা করানো হয়। সে হিসেবে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ডা. সানিয়া তাহমিনা ঝোরাকে দিয়ে বুলেটিন চালানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের।
কিন্তু তিনি এখন আইসোলেশনে আছেন। তাই নাসিমা সুলতানার জন্য মানবিক কারণে এই বুলেটিন বন্ধ করা হয়েছে। আগামীতে যদি আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ে, তখন পুনরায় স্বাস্থ্য বুলেটিন রিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এসব ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি চিঠি দিয়েছি, সেটা ঠিক। কিন্তু আমি কোথাও আমার অসুস্থতার কথা বলিনি। আমি চিঠিতে বলেছি, মানুষ নিয়মিত মৃত্যুর খবর নিতে নিতে ক্লান্ত। অনেককে বাজে মন্তব্য করতেও শোনা যায়। সে জন্য আমি বলেছি, লাইভ বুলেটিন না করে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এই করোনা-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা যায় কিনা। এবং এ বিষয়টি কিন্তু আরো আগে থেকে আলোচনায় ছিল।’