কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি দেখতে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুরুশকুল দেখতে যাবো। শুঁটকি দিয়ে ভাত খাব। শুঁটকি মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খাব।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬শটি পরিবার। এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত পাঁচতলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।
সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।
প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।
খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খুরুশকূলে আলাদা একটা সুন্দর শহর গড়ে উঠবে উল্লেখ করে ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়া জলবায়ু উদ্বাস্ত পরিবারের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা এতদিন যেভাবে ছিলেন কষ্টের মধ্যে আমি নিজে গিয়েছি, দেখেছি সেটা। এখন আপনারা সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজকে যেই ঘরবাড়িগুলো করে দেওয়া হলো মনে রাখবেন এটা আপনাদেরই নিজের। সেভাবে যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবেন। সুন্দরভাবে যাতে থাকে সেদিকে দেখবেন।
সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলতে বৃক্ষরোপন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে নদীর কূল ধরে সবুজ বেষ্টনি করে দেওয়া হবে। কোন রকম ঝড় জলোচ্ছাসে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এবং আপনারাও ব্যাপকভাবে একটু বৃক্ষরোপন করবেন। পুকুর কেটে দেওয়া হয়েছে। আর তাছাড়া জীবন জীবিকার যেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দেব। সেভাবেই সবাইকে পুনর্বাসন করতে চাই।
সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু এখানে না,সারা বাংলাদেশেই আমরা কোথায় গৃহহীন,ভূমিহীন মানুষ আছে তাদেরকে আমরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন. আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন ঘর করে দিচ্ছি পাশাপাশি যাদের জমি আছে তাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য গৃহায়ন তহবিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা তহবিল করা আছে সেখান থেকে যেকোন প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে ঘর করতে পারে। আর আমরা নিজেরাও আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও যাদের জমি আছে, ভিটা আছে কিন্তু ঘর নাই তাদের ঘর করে দিচ্ছি বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে আমি যেভাবে পারি গরিবানা হালে হলেও একটা চালা করে দিলেও সেটা আমরা করে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এতদিন বস্তির ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন শেষে দালানে উঠতে পেরে আবেগাফ্লুত হয়ে পড়েন তারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দেন তারা। এই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান উপকারভোগীরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।