নাগরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি তুরস্ক ও রাশিয়া যৌথভাবে তদারকি করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এই তথ্য জানিয়েছেন।
তুর্কি নেতার কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় এরদোগান একটি ‘যৌথ কেন্দ্র’ তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এরদোগান জানিয়েছেন যে, ‘যৌথ কেন্দ্র’ গঠনের মাধ্যমে তুরস্ক রাশিয়ার সাথে একত্রে নজরদারি ও তদারকি করবে। আর্মেনিয়ার দখল থেকে মুক্ত করা অঞ্চলগুলোর মধ্যে থেকে আজারবাইজান দ্বারা নির্ধারিত কোনো স্থান থেকে এটি পরিচালিত হবে। তবে, চলতি সপ্তাহে পুতিনের সাথে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার নেতাদের স্বাক্ষরিত ৯-দফা চুক্তিতে এই ‘যৌথ কেন্দ্র’ সৃষ্টির কথা বলা হয়নি।
ইতোমধ্যে নাগরনো-কারাবাখে দুই হাজার সেনা, ৯০টি ট্যাঙ্ক এবং ৩৮০টি সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছে রাশিয়া। বুধবার থেকে গোটা এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী শক্তি হিসেবে সেখানে অবস্থান করছেন রাশিয়ার সেনা। সোমবারই আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং রাশিয়ার মধ্যে নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে শান্তি চুক্তি সই হয়েছিল। সেই চুক্তিতেই বলা হয়েছিল, আপাতত গোটা এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তাদের পাশাপাশি তুরস্কও ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেবে।
বস্তুত, সোমবারের চুক্তির পর আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান কোনো পক্ষই আর যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। আজারবাইজান সোমবারের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বিষয়টিকে তাদের জয় হিসেবেই দেখছে। মঙ্গলবার আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ জানিয়েছেন, বহু দিন ধরেই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আজারবাইজানের মানুষ। অন্য দিকে আর্মেনিয়ায় মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। কেন সরকার এই চুক্তি মেনে নিলো, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান মঙ্গলবারও বলেছেন, মন ভার করেই তাকে এই চুক্তি মেনে নিতে হয়েছে।
নব্বইয়ের দশক থেকে নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজানের সাথে আর্মেনিয়ার সংঘর্ষ। সে সময় দুই পক্ষের যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যুদ্ধ থামলেও বিতর্ক থামেনি। আন্তর্জাতিক ভাবে নাগরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের এলাকা হলেও সেখানে বসবাস করেন আর্মেনিয়ার জনগোষ্ঠী। দীর্ঘদিন সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কার্যত স্বাধীন সরকার পরিচালনা করেছে। আর্মেনিয়া তাদের মদদ দিয়েছে। এরই বিরুদ্ধে এবার ফের যুদ্ধ শুরু করে আজারবাইজান। গত প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুই পক্ষেরই। রাশিয়া এবং আমেরিকা এর আগে তিনবার যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করেছে। দুই দেশকে বৈঠকে বসিয়েছে। চুক্তিও হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ থামেনি। সোমবারের চুক্তি নিয়েও অনেকের ধারণা ছিল, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। কিন্তু মঙ্গলবার এবং বুধবার সকালে কোনো পক্ষই সংঘর্ষে নামেনি। তারই মধ্যে এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে রাশিয়ার সেনা। রয়টার্স ও এপি..