মুরাদনগর গ্রামের কালাম মোল্লা। পেশায় ভাড়ায় চালিত রিকশার চালক। গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে রিকশা চালিয়ে চলে তার ছয় সদস্যের সংসার। রিকশা ভাড়া মেটানোর পর দিন শেষে পকেটে পড়ে থাকে ৪০০-৪৫০ টাকা।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে খাবার কিনে পরিবারের সদস্যের মুখে দুই বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়াই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার পক্ষে।
কালামের মতো আব্দুল ওহাবের অবস্থাও তথৈবচ। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। মাস শেষে বেতন পান মাত্র ১২ হাজার টাকা। সেই টাকায় বাসা ভাড়া মিটিয়ে শহরে বাস করা রীতি মতো যুদ্ধক্ষেত্র মনে হচ্ছে তার কাছে। কারো কাছে সাহায্য চাইতেও পারেন না। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এসব নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা এখন নাজেহাল। দু’বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে থাকাটাই যেন তাদের কাছে বড় সাফল্য। পেটের ভাত কোনো রকমে জোগানো গেলেও চিকিৎসা ও বিনোদন খরচ জোগার করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামের সাথে বাড়েনি তাদের আয় রোজগার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির।
গলাচিপার চৌরাস্তার দোকানদার রহিম গাজী বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তাই ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা আয় হচ্ছে। দোকান ভাড়া ও অন্যান্য বিল মিটিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। আবার কোনো কোনো দিন বেচাকেনা হয় না।
চা দোকানি শাহ আলম বলেন, চায়ের দোকান চালিয়ে চারজনের সংসার এখন আর চালাতে পারছি না। প্রতিনিয়ত ঋণগ্রস্ত হচ্ছি। দোকানে আগের মতো বেচাকেনা নেই।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কোরবানি প্রোগ্রামের গরুর গোশত নিতে আসা এক সুবিধাভোগী ১৪ বছর বয়সী এতিম জীবনের দাদী হালিমা জানান, ‘যেডু গোশত পাইছি, অপ্প অপ্প করে ম্যালা দিন খামু। নাতিডার লইগ্গা গোশত পাইছি। নাতিডারে নিয়ে মোরা গোশত কবে খাইছি মনে নাই। আবার কবে গোশত পামু আর আল্লাহ কবে খাওয়াইবে জানি না।’