আগামীতে পুঁজিবাজারে ব্যাপক বিনিয়োগের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে নোয়াখালী জেলার মাইজদীর দত্তেরহাটে অবস্থিত নোয়া কনভেনশন সেন্টার অ্যান্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার ব্যাপক ভূমিকা রাখার মতো তার প্রেক্ষাপট রয়েছে। পুঁজিবাজারের অন্যতম একটি ফান্ডামেন্টাল হলো মার্কেট পিই (প্রাইস আর্নিং রেশিও)।
বর্তমানে আমাদের পুঁজিবাজারের যে পিই রয়েছে, তা আশপাশের দু-একটি দেশের তুলনায় অনেক কম রয়েছে। অর্থাৎ এখনও আমাদের পুঁজিবাজারে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার মতো সক্ষমতা রয়েছে।
পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকা থাকলেই আসলে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ করা যায় না। টাকাকে বিনিয়োগ করা জন্য জানতে হবে। সেটা জানানোর জন্যই আমরা আপনাদের এখানে এসেছি। বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এটি ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে। যেকোনো ধরনের বিনিয়োগজনিত তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের একটি ওয়েবসাইট (www.finlitbd.com) রয়েছে। সেখানে বাংলা ও ইংরেজিতে নানা তথ্য আছে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিএসইসি কমিশনার বলেন, আমরা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই কাজ করছি। এখন আপনাদের একটি বিও অ্যাকাউন্ট থাকলেই শেয়ার ছাড়াও ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবেন। বর্তমানের আমরা পুঁজিবাজারে নানান ধরনের প্রোডাক্ট আপনাদের জন্য এনেছি। আমাদের পুঁজিবাজার আপনাদের বিনিয়োগকে সুনিশ্চিত করতে সার্বিকভাবে সক্ষম।
আমাদের ব্যাংকের লিকুইডিটির পজিশন ভালো অবস্থানে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি খারাপ ভাবার কোনো যুক্তি নেই। বর্তমানের আমাদের প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত লিকুইডিটি রয়েছে। আমাদের রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই কথা বলেন, সেগুলো যৌক্তিক নয়। আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। এখনও তিন-চার মাসের ক্রয় ক্ষমতার রিজার্ভ রয়েছে। আমরা আশা করছি অচিরেই এটি ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে চলে যাবে। অনেকেই আমাদের রিজার্ভ ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে গুজব সৃষ্টি করছে। অবশ্যই এগুলো নিয়ে চিন্তার বিষয় রয়েছে। অবশ্যই এগুলো পরিবর্তন হয়েছে। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্দেহের উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমান তথ্যগুলো সংগ্রহ করে যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করলে তা কোনোটি সন্দেহজনক নয়, কোনোটি ভীতি সৃষ্টিকারক নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এগুলোর সংযুক্তি রয়েছে। এজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে পুঁজিবাজারে সংযুক্ত থাকার জন্য।
কমিশনার বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে টেকনোলজির ওপর অনেক নির্ভরশীল। আমাদের টেকনোলজিতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এটা কল্পনার বাইরে যে, আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩.৭ বিলিয়ন টাকা লেনদেন করে থাকি বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে।
শামসুদ্দিন আহমেদ এসময় আরও বলেন, আমাদের ২০৪১ সাল পর্যন্ত রূপকল্প রয়েছে। বর্তমানে আমাদের যে গ্রোথ রয়েছে এবং আগামী ২০ বছরের যে ডায়মেনশন রয়েছে, সেখানে আমরা লক্ষ্য করছি উন্নত বিশ্বে পরিণত হওয়ার একটি হাতছানি ও স্বপ্ন রয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সেটি রিফলেক্টিভ ও অর্জন করা সম্ভব। আর এটা অর্জন করতে হলে আমাদেরকে পুঁজিবাজারে সংযুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে বিশেষ পরিবর্তন হয়েছে, যা অকল্পনীয়। সেখান থেকে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশ অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক অবস্থানে এসেছে। সেজন্য মৌলিক অর্থনৈতিক তথ্য আমাদেরকে প্রলুব্ধ করবে এদেশের প্রতি আস্থা এবং প্রেক্ষাপটকে সুনিশ্চিত করতে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. সহিদ উল্যাহ খান এবং নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা তপন চন্দ্র মজুমদার।