ছয় থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে এবার তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীরা এখনো নিরাপদ রয়েছে।
সোমবার সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কেন্দ্রটি গত চার দিনে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।গত দুই দিনের ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তাঘাটসহ বন্যপ্রাণী রাখার সেডেও পানি ঢুকে পড়েছে। তবে, এখনো করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে।
এখন পর্যন্ত পর্যটনসহ সব ধরণের বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানির তোড়ে সুন্দরবনের বাঘ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কী ঘটেছে বা কেমন আছে তা নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে জানা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের সব নদীর পানি বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় বাগেরহাট শহর, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে তিনটি পৌরসভাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। মোরেলগঞ্জ বাজারসহ ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে হু-হু করে পানি ঢুকছে। অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত রয়েছে।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল ওঠায় শনিবার রাত থেকে সাগরে ফের ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন নম্বর সংকেতের মধ্যে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে রোববার ভোর থেকে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে বাগেরহাটের সব নদ-নদীর পানি। এত করে জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে জেলায় পাউবোর বাঁধ স্বাভাবিক রয়েছে।